সরকারি কাজেও কাগজপত্র ঠিক নেই! ঠিকাদারদের বকেয়া টাকার পাহাড় কৃষ্ণনগর পুরসভায়
বর্তমান | ১৪ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণনগর পুরসভায় কাগজপত্র ছাড়া স্রেফ মুখের কথাতেই হয়ে গিয়েছে বহু কাজ। লক্ষাধিক টাকার কাজ টেন্ডার, ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়াই করে দিয়েছেন ঠিকাদাররা। নিয়ম মাফিক যা করা যায় না। অথচ ঠিকাদাররা সেটাই করেছেন। আর তাঁরা সেটা করেছেন শহরের নেতার আশ্বাস ও মুখে কথাতেই। ঠিকাদারদের অনেকেই ভেবেছিলেন, নেতার সান্নিধ্যে থেকেই পুরসভায় মৌরসিপাট্টা চালাবেন। শহরের সরকারি কাজের ‘বন্টন’ করবেন স্বেচ্ছামতো। কিন্তু সম্প্রতি পুরসভার বোর্ড ভাঙতেই ঘুম ভেঙেছে ঠিকাদারদের। কারণ দেখা যাচ্ছে, কাজ করেও টাকা তোলেননি বহু ঠিকাদার। বছরের পর বছর ধরে বকেয়া সেই টাকা পুরসভার কাছেই থেকে গিয়েছে। যার ফলে বকেয়া টাকার পাহাড় জমেছে কৃষ্ণনগর পুরসভায়। এবার সেই টাকা নিতে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। পুরসভার প্রশাসকের কাছে পুরনো টাকা ছাড়ার আবেদন করেছেন তাঁরা। এমনকী ঠিকাদারের হয়ে সুপারিশ করতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলাদেরও। যদিও নথিপত্র ভালোভাবে না দেখে বর্তমানে টাকা ছাড়তে চাইছে না পুরসভাও। সেই সঙ্গে কাগজপত্র ঠিক থাকলে, দ্রুত টাকার আশ্বাসও দেওয়া হচ্ছে পুরসভার তরফ থেকে।
কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রশাসক তথা কৃষ্ণনগর সদরের মহকুমা শাসক শারদ্বতী চৌধুরী বলেন, আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান কর্মসূচির যে সমস্ত কাজ নেওয়া হচ্ছে, সেসবের ক্ষেত্রে দ্রুত টাকা ছাড়া হচ্ছে। কারণ তার জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে। আর কাজের নথিপত্র সমস্ত কিছু যাচাই করে তবেই পুরোনো কাজের বকেয়া টাকা ছাড়া হচ্ছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণনগর পুরসভায় আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান কর্মসূচির সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জোর দেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণনগর শহরজুড়ে প্রায় ১০০০টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৫৩৩টি প্রকল্পের অনুমোদন এসেছে। যার মধ্যে চারশোর বেশি প্রকল্পের টেন্ডার হয়েছে। এখনও পর্যন্ত শহরের ২০টি প্রকল্পের ওয়ার্ক অর্ডার ইস্যু করা হয়েছে। তবে দু’টি প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। সেই কাজের জন্য ইতিমধ্যেই জন্য ঠিকাদারকে পেমেন্টও করা হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে নিয়ম মেনে কাজ হলে তবেই টাকা ছাড়ার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অতীতে ঠিকাদাররা অনেক কাজই নেতাদের মুখের কথাতেই করে দিয়েছেন। তাঁরা আশা করেছিলেন, পরবর্তীকালে যখনই হোক সেই টাকা তাঁরা পেয়ে যাবেন। কারণ ঠিকাদারও জানতেন, নেতার হাত তাঁর মাথায় রয়েছে। তাই বকেয়া টাকা পাওয়ার ব্যাপারে একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন তাঁরা। বর্তমানে এরকম ভূরি ভূরি উদাহরণ পুর কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। এবার পুরসভার বোর্ড ভাঙতেই ঠিকাদারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। নেতার মুখের কথায় করা সেই কাজের টাকা কবে পাবেন, কিংবা আদৌও পাবেন কি না, সেই নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তাঁরা। যার জন্য সারাদিন পুরসভায় ধর্না দিয়ে পড়ে রয়েছেন ঠিকাদাররা। মাথায় হাত প্রাক্তন কাউন্সিলারদেরও। কারণ এক সময় তাঁর কথাতেই তো ঠিকাদার কাজ করেছিলেন। যার ফলে চাপে পড়েছেন কাউন্সিলাররা। সম্প্রতি, কৃষ্ণনগরের কদমতলা ঘাট এলাকায় পেভার ব্লকের একটি রাস্তা তৈরি নিয়ে শহরজুড়ে বিতর্ক দেখা যায়। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই কাজ শেষ হয়ে যায়। বর্তমান সেই কাজের পেমেন্টও আটকে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে।