• হস্টেলে কে লিখল ঘৃণার বার্তা, তোলপাড় আইএসআই
    আনন্দবাজার | ১৪ নভেম্বর ২০২৫
  • ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের ছাত্রাবাসের ফটকে চকে লেখা বড় হরফের ঘৃণা বার্তা। সি ভি রমন হলের সিঁড়ির গায়ে, ওয়াশিং মেশিন রুমের দরজায়, তেতলার ডাস্টবিনে একটি গোষ্ঠীকে নিশানা করে ঘৃণাসূচক উস্কানির মন্তব্য স্বভাবতই তোলপাড় ফেলেছে ইনস্টিটিউট অব ন্যাশনাল ইম্পর্ট্যান্স মর্যাদাবাহী এই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি জানাজানির পরে বৃহস্পতিবার আইএসআইয়ের ডিন অব স্টাডিজ় বিশ্বব্রত প্রধানের তরফে অবশ্য দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হয়। ডিরেক্টর সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এর কড়া নিন্দা করে অভ্যন্তরীণ তদন্তের আশ্বাস দেন।

    সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। আর মঙ্গলবার সকালেই দরজায়, সিঁড়িতে, ডাস্টবিনের গায়ে দুষ্কর্মটি হস্টেলের আবাসিকদের নজরে আসে। মুসলিম বিদ্বেষী এমন কটূক্তি চোখে পড়ায় ছাত্রেরাই বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আইএসআই সংক্রান্ত নতুন বিলে প্রতিষ্ঠানটির খোলনলচে পাল্টে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে শিক্ষাঙ্গনে গোষ্ঠী বিদ্বেষের ছায়া এসে পড়ায় আইএসআইয়ের শিক্ষক, ছাত্র, প্রাক্তনীদের অনেকেই মর্মাহত। প্রতিবাদী ছাত্র, শিক্ষকদের চাপ সৃষ্টির আগে কর্তৃপক্ষের তরফেও স্পষ্ট অবস্থান নিতে দেরি হয় বলে ক্ষোভ ছড়িয়েছে কয়েকটি মহলে।

    অতীতে এ দেশে পুলওয়ামার ঘটনার থেকেই কোনও হিংসা বা সন্ত্রাসের ঘটনার সূত্রে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রছাত্রীদের নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে হেনস্থার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। তবে আইএসআই বা এ রাজ্যে এই ধরনের ঘটনা কার্যত বেনজির। এই জায়গাটি থেকেও আইএসআইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানা মহল ব্যথিত। তবে আইএসআইয়ের ডিরেক্টর সঙ্ঘমিত্রা এ দিন বলেন, ‘‘যা ঘটেছে, তা কখনওই আইএসআইয়ের আদর্শ, সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। জাত, ধর্ম বা কোনও গোষ্ঠী ভিত্তিক বৈষম্য, বিদ্বেষ এই শিক্ষাঙ্গনের ঐতিহ্যের সঙ্গে মেলে না। আমাদের মনে হয়, মুষ্টিমেয় ক’জন বা কোনও বিক্ষিপ্ত ব্যক্তি এ কাজ করেছে। এটা বিকৃতি।’’

    ডিনের বার্তাটিও আইএসআইয়ে গোড়া থেকে সবাইকে নিয়ে চলার আদর্শ মনে করায়। হস্টেলের কটূক্তি ছাত্রদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করে এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। সঙ্ঘমিত্রা জানান, দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার পাশাপাশি, শিক্ষাঙ্গনে বিদ্বেষমূলক দৃষ্টিভঙ্গির মোকাবিলায় মানসিক শুশ্রূষার বা কাউন্সেলিংয়ের বন্দোবস্ত করা হবে।

    ঘটনাচক্রে, এ দিনই আইএসআইয়ের সিমেস্টার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। দফায় দফায় সবার পরীক্ষা শেষ হতে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ। এই পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি অক্ষুণ্ণ রাখাও তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে জানাচ্ছেন ডেপুটি ডিরেক্টর দীপ্তিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এখনও বলব না, কোনও ছাত্রই এমন করেছেন। যারা করেছে, নিরপেক্ষ তদন্তে তাদের চিহ্নিত করা হবে।’’

    ছাত্রদের একাংশের বক্তব্য, রাতভর পরীক্ষার পড়া করে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছ’টায় অনেকে হস্টেল থেকে বেরিয়ে চা খেতে গিয়েছিলেন। তখনও লেখাটা চোখে পড়েনি। ওই ছাত্রদের ধারণা, ঘটনাটি ঘটে সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে। কারা এ সব লিখেছে, তা হস্টেলের সিসি ক্যামেরায় নিশ্চিত ভাবে ধরা না-গেলেও কিছু সূত্র মিলতে পারে বলে পড়ুয়াদের মত। চকের ওই লেখা অবশ্য কর্তৃপক্ষ এ দিন মুছিয়ে দেন। ছাত্রদের মত, ঘটনাটি নিয়ে কী তদন্ত শুরু হল, বোঝা যাচ্ছে না।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)