• হিপ্পির মেসেজে পদত্যাগ নয়, ‘বিদ্রোহ’ রবির, কৌতূহল দলের অবস্থান নিয়ে
    এই সময় | ১৪ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, কোচবিহার: দলনেত্রী বললে বিষ খাবেন, গুলি খেতেও আপত্তি নেই। এমনকী, হাওড়া ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিতেও রাজি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া অন্য কারও নির্দেশে পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে সরবেন না। জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক কাছ থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ পাওয়ার পরে এ ভাবেই বোমা ফাটালেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তাঁর সাফ কথা, 'জেলা সভাপতি তাঁকে পদত্যাগের যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা এক্তিয়ার বহির্ভূত। এ ভাবে কাউকে প্রশাসনিক পদ থেকে সরানো যায় না।' বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে সোজাসাপটা মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন রবি। কিন্তু বৃহস্পতিবার তাঁর এই 'বিদ্রোহ' বাকি পুরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানদের 'বিদ্রোহী' করে তুলেছে। পদত্যাগ করতে বেঁকে বসেছেন অনেকে।

    বৃহস্পতিবার কোচবিহার পুরসভায় সাংবাদিক বৈঠকে রবি বলেন, 'বুধবার দলের জেলা সভাপতি মেসেজ পাঠিয়েছেন। সেখানে সাত দিনের মধ্যে আমাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। ২২ বছর কোচবিহার তৃণমূলের জেলা সভাপতি ছিলাম। তাই দলের সংবিধান, নিয়ম কিছুটা জানি। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এগুলো প্রশাসনিক পদ। মুখ্যমন্ত্রী এই পদে আমাকে নিয়োগ করেছিলেন। রাজ্য নেতৃত্ব এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে পদত্যাগের কোনও বার্তা আসেনি। সেখান থেকে বার্তা এলে পদত্যাগ করতে এক মিনিটও ভাবব না। জেলা সভাপতি এই ধরনের কোনও নির্দেশ দিতেই পারেন না।' আরও একধাপ এগিয়ে তাঁর তোপ, 'এ ভাবে দলের ক্ষতি হচ্ছে। দলের বারোটা বাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে।'

    তৃণমূলের প্রবীণ নেতার সাংবাদিক বৈঠকের পরে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। বুধবার রাতে কোচবিহারের পাশাপাশি হলদিবাড়ি এবং মাথাভাঙা পুরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানকেও পদত্যাগ করতে বলা হয়। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার দলীয় নির্দেশ অমান্য করার সিদ্ধান্ত নেন চেয়ারম্যান শঙ্করকুমার দাস ও ভাইস চেয়ারম্যান অমিতাভ বিশ্বাস। পুরসভার সিংহভাগ কাউন্সিলারই তাঁদের অনুগামী। এ দিন রবির সাংবাদিক বৈঠকের পরে পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তে আরও দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন শঙ্কররা।

    সূত্রের খবর, কোচবিহারের পুরপ্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে হলদিবাড়ির পুরপ্রধানের। একই ভাবে মাথাভাঙা পুরসভার চেয়ারম্যান লক্ষপতি প্রামাণিকও পদত্যাগের নির্দেশকে কড়া সমালোচনা করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, 'দলের নির্দেশে দু'-একদিনের মধ্যেই পদত্যাগ করব। তবে কী কারণে জেলা সভাপতি পদত্যাগ করতে বললেন, তার কোনও কারণ বা যুক্তি দর্শানো হয়নি। একটা সময়ে যারা মাথাভাঙায় দলের বিরোধিতা করেছিল, তাঁরাই এখন পুরস্কৃত হচ্ছেন।'

    তৃণমূলের কোচবিহার জেলার সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক (হিপ্পি) ও চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কোচবিহারে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এখন 'ওপেন সিক্রেট'। এর আগে একাধিক বার রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল। প্রতি বারই তাঁর হয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনের তাঁর বিস্ফোরক মন্তব্যের পরে দল ও দলনেত্রীর অবস্থান নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)