• কাজের দিন সকাল থেকেই জনতা ইডেনমুখী, টিকিটের দাম কমিয়ে প্রথম বড় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সিএবি সভাপতি সৌরভ
    আনন্দবাজার | ১৪ নভেম্বর ২০২৫
  • ছ’বছর পর আবার টেস্ট ক্রিকেট ফিরেছে ইডেন গার্ডেন্সে। শেষ যে ম্যাচ হয়েছিল, সেই ম্যাচ থেকে একমাত্র রবীন্দ্র জাডেজা এই টেস্টেও খেলছেন। বাকি দল বদলে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে বাংলার ক্রিকেট প্রশাসনও। দ্বিতীয় বারের জন্য সিএবি সভাপতি হয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর সামনে কঠিন পরীক্ষা ছিল। ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে ইডেন ভরবে কি না সে দিকে নজর ছিল সকলের। টিকিটের দাম কম রেখে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন সৌরভ। প্রথম দিনই ভরেছে ইডেন।

    শুক্রবার কাজের দিনেও সকাল থেকে ইডেনমুখী জনতার ঢল দেখা গিয়েছিল। সকাল সকাল মেট্রো, লোকাল ট্রেনে চেপে অনেকে এসেছেন কলকাতায়। দলে দলে মাঠ ভরিয়েছেন তাঁরা। অনেকের গায়ে ছিল ভারতীয় দলের জার্সি। খেলা শুরুর কিছু ক্ষণ পর দেখা গেল, লোয়ার ও মিডল টায়ার প্রায় ভর্তি। আপার টায়ার অবশ্য তুলনায় ফাঁকা ছিল।

    সিএবি জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুর ২টো পর্যন্ত ইডেনের দর্শকসংখ্যা ছিল ৩৫,০২২। হয়তো বেলা বাড়লে সংখ্যাটা আরও কিছুটা বাড়বে। কারণ, কাজের দিন হওয়ায় অফিস থেকে অর্ধেক দিন ছুটি নিয়ে কেউ কেউ খেলা দেখতে আসতে পারেন।

    ইডেনে এখন ৬৮ হাজার দর্শক ধরে। তার মধ্যে ৩৬ হাজার টিকিট ছাড়া হয়েছিল। সৌরভ কয়েক দিন আগেই জানিয়েছিলেন, সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বাকি টিকিট ছিল ‘কমপ্লিমেন্টরি’। সেই টিকিট নিয়েও অনেকে খেলা দেখতে এসেছেন। ৬৮ হাজারের দর্শকাসনের মধ্যে প্রথম দিন অর্ধেকের বেশি আসন ভরেছে। এই সংখ্যা কিন্তু কম নয়। কারণ, শুক্রবার কাজের দিন। পাশাপাশি ভারত প্রথমে ব্যাট করেনি। ভারতের ব্যাটিং দেখতেই মাঠে দর্শক বেশি আসেন। শেষ এই মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছিল ২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপে। সে বারও ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ হয়েছিল। সেই ম্যাচে খেলেছিলেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। তাঁদের দেখতে ভিড় হয় মাঠে। আইপিএলে তাঁরা প্রতিপক্ষ দলে থাকলেও সমর্থন কম থাকে না। রোহিত, কোহলিকে ছাড়া এই ম্যাচ খেলতে নেমেছে ভারত। তার পরেও ৩৫ হাজারের ভিড় কম নয়।

    ইডেন বা ভারতের অন্য মাঠে আইপিএলের ম্যাচে দর্শকের সমস্যা হয় না। কেকেআর চ্যাম্পিয়নই হোক, বা খারাপ খেলুক, ইডেনের গ্যালারি ভরে যায়। টি২০-র বিনোদন দেখতে দর্শকের অভাব হয় না। কিন্তু টেস্ট ম্যাচে কি দর্শক হবে? সেটাই ছিল বড় প্রশ্ন। বিশেষ করে আগের ওয়েস্ট ইন্ডিজ় সিরিজ়ে প্রথম টেস্টে অহমদাবাদের মাঠ ছিল ফাঁকা। নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম এখন ভারতের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। বড় মাঠের ক্ষেত্রে টেস্টে দর্শকের সমস্যা আরও বাড়ে। কারণ, যে পরিমাণ দর্শক থাকলে ছোট মাঠ ভরে যায়, সেই পরিমাণ দর্শক থাকলেও বড় মাঠ ফাঁকা লাগে। ইডেনও বড় মাঠের মধ্যেই পড়ে। ফলে চ্যালেঞ্জটা এখানেও ছিল।

    বিদেশের মাঠে দর্শকের সমস্যা দেখা যায় না। গত ভারত-অস্ট্রেলিয়া ও ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ়ে দেখা গিয়েছে, পাঁচ টেস্টের পাঁচ দিন মাঠ ভর্তি। বিশেষ করে ভারত-ইংল্যান্ড শেষ টেস্টের শেষ দিন ওভালে মাত্র ৫৭ মিনিট খেলা হয়েছে। ওই টুকু সময়ের জন্যও মাঠ ভরে গিয়েছিল। টেস্টকে নিয়ে এই উন্মাদনার অভাব ভারতে রয়েছে। সপ্তাহান্তে তা-ও মানুষের ছুটি থাকে, কিন্তু কাজের দিন মাঠে যাওয়ার সুযোগ ও ইচ্ছা বেশির ভাগেরই থাকে না। সেখানে শুক্রবারের ইডেন ব্যতিক্রম।

    সৌরভ অবশ্য একটা বুদ্ধি খাটিয়েছিলেন। টিকিটের দাম অনেক কম রাখা হয়েছে। ইডেন মাত্র ৬০ টাকায় এক দিনের খেলা দেখা যাচ্ছে। পাঁচ দিনের জন্য টিকিটের সর্বনিম্ন দাম ৩০০ টাকা। রাখা হয়েছিল। সর্বোচ্চ দামও (প্রতি দিনের জন্য ২৫০ টাকা, পাঁচ দিনের জন্য ১২৫০ টাকা) খুব বেশি ছিল না। আইপিএলে তো এর থেকে অনেক বেশি টাকা দিয়ে দর্শকেরা টিকিট কেনেন। গত আইপিএলে ইডেনে আইপিএলের ম্যাচের টিকিটের সর্বনিম্ন দাম ছিল ৯০০ টাকা। এর পর দু’হাজার, সাড়ে তিন হাজার, পাঁচ হাজার, ছ’হাজার, ১০ হাজার ও ১৫ হাজার টাকার টিকিট ছিল। টেস্ট ম্যাচে দাম কম রাখায় টিকিট কেনার প্রবণতা বেড়েছে। মাত্র ৬০ টাকায় শুভমন গিল, ঋষভ পন্থ, জসপ্রীত বুমরাহদের দেখতে মাঠ ভরিয়েছেন সকলে।

    ইডেন অবশ্য ক্রিকেটারদের কখনও খালি হাতে ফেরায়নি। ভারতের বাকি মাঠগুলির থেকে এই মাঠ আলাদা। ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভিভিএস লক্ষ্মণ-রাহুল দ্রাবিড়ের সেই ঐতিহাসিক জুটির সময়ও ইডেন ছিল ভর্তি। ভারত ফলো-অন খাওয়ার পরেও দর্শক এসেছিল। ভারতকে সমর্থন করেছিল। সেই ধারা যে বদলায়নি তা আরও এক বার দেখা গেল। সৌরভের মান বাঁচিয়ে মাঠ ভরালেন জনতা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)