‘২১ মিললেও পূর্বাভাস মিলল না পঁচিশে, মুখ থুবড়ে পড়ল জন সুরাজ, রাজনীতিতে প্রশান্ত এখনও কিশোরই
প্রতিদিন | ১৪ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০২০ ডিসেম্বরেও তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বাংলায় বিজেপি একশো পেরবে না। মিলেও ছিল তাঁর পূর্বাভাস। কিন্তু তার পাঁচ বছর পর বিহার ভোট নিয়ে প্রশান্ত কিশোরের ভবিষ্যদ্বাণী শুধু মুখ থুবড়ে পড়েছে বললেও কম বলা হবে। ভোটের আগে তিনি বলেছিলেন, “বিহারে পঁচিশের বেশি আসন পাবে না জেডিইউ। নীতীশ কুমার আর মুখ্যমন্ত্রী হবেন না।” সেই পূর্বাভাস একেবারেই মেলেনি। বিহারের ভোটের ফল (Bihar Assembly Election Results) বলছে, প্রশান্তর দল জন সুরাজ পার্টি কোনওরকম কোনও প্রভাবই ফেলতে পারেনি। নিজের জয় তো নয়ই, অন্য দলের যাত্রাভঙ্গ করার মতো জায়গাতেও পৌঁছতে পারেনি জন সুরাজ। ভোটকুশলী হিসাবে সাফল্য পেলেও রাজনীতির ময়দানে সরাসরি নেমে প্রশান্ত কিশোর রীতিমতো জলহীন মাছের মতো খাবি খাচ্ছেন।
রাজনীতিতে প্রশান্ত কিশোর পা রেখেছিলেন রীতিমতো ধুমধাম করে। ভোটকুশলী হিসাবে প্রায় সব রাজ্যে সাফল্য। বিহারে তৃণমূল স্তরে নেমে কাজ করার লক্ষ্যে পদযাত্রা। প্রায় ৩ বছর বিহারের গ্রামে গ্রামে ঘোরা। রীতিমতো কর্পোরেট ভঙ্গিমায় দল ঘোষণা। কোটি কোটি টাকা খরচ করে সভা-সমিতি করা। প্রচারে আলাদা করে পেশাদারদের ব্যবহার। ভিনরাজ্যের পরিযায়ী বিহারীদের জন্যও আলাদা করে কর্পোরেট দল তৈরি করে প্রচার করা। এবং সর্বোপরি সোশাল মিডিয়ায় হইচই।
বস্তুত, এনডিএ বনাম মহাজোটের চিরাচারিত লড়াইয়ে বিহারের রাজনীতিতে তৃতীয় বিকল্প হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন পিকে। তাঁর জন সুরাজ পার্টি জাতপাতের রাজনীতিতে ক্লিষ্ট বিহারে নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু সেই সবটাই সোশাল মিডিয়া এবং সংবাদমাধ্যমে। প্রশান্ত মাঝে মাঝে সংবাদমাধ্যমে ইন্টারভিউ দেন, বড় বড় দাবি করেন, প্রচারে থাকেন। কিন্তু রাজনীতির রুঢ় বাস্তব যে অনেক কঠিন সেটা বোধ হয়তো ঠান্ডা ঘরে বসে কৌশল তৈরি করা পিকে তখনও বোঝেননি। শুধু কর্পোরেট ছাউনি এবং মিডিয়া বা সোশাল মিডিয়ার প্রচার আর যা-ই হোক বিহারের মতো রাজ্যে রাজনীতি করার সঠিক পন্থা নয়, সেটা বুঝে উঠতে পারেননি তিনি। বাংলায় যে ভুলটা সিপিএম করে সোশাল মিডিয়া নির্ভর প্রচার করেছিল, সেই একই ভুল প্রশান্ত কিশোরের মতো পোড়খাওয়া ভোটকুশলী বিহারে কী করে করলেন, সেটা গবেষণার বিষয় হতে পারে।
ভুলের এখানেই শেষ নয়। বিহারের ভোটপ্রচারে গুচ্ছ গুচ্ছ ভুল করে গিয়েছেন তিনি। প্রথমে ঘোষণা করেছিলেন, অন্য দলের কাউকে নেবেন না। ঘোষণা করেছিলেন, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কাউকে টিকিট দেবেন না। ঘোষণা করেছিলেন, দলের প্রথম সভাপতি দলিত হবে। কোনওটিই তিনি মানেননি। তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল সম্ভবত নিজের ভোটে না লড়া। যে প্রশান্ত কিশোর বঙ্গে মমতাকে জেতাতে নন্দীগ্রামের মতো কঠিন আসনে লড়াই করার পরামর্শ দেন, যে প্রশান্ত কিশোর সবসময় দলের শীর্ষনেতাদের ভোটে লড়াই করার পক্ষে মত দেন, তিনি নিজে ঠিক কীসের ভয়ে ভোটে লড়লেন না, সেটা তিনিই জানেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত যে তাঁর দলের আসন জয়ের যেটুকু সম্ভাবনা ছিল, সেটাকেও ধূলিসাৎ করে দিয়েছে তা ভোটের ফলেই স্পষ্ট। ভোটকুশলী হিসাবে কৌশল তৈরির সময় যে ভুলগুলো ধরা যায়, বা পরামর্শ দেওয়া যায়, সেটা বোধ হয় নেতা হিসাবে পথে নেমে করার সময় ধরাটা কঠিন। নাহলে প্রশান্ত এত ভুল করবেন কেন?
আসলে বিহারে ভোট করাতে গেলে জাতপাতের সমীকরণ প্রয়োজন, তৃণমূল স্তরে সংগঠন প্রয়োজন, বাহুবলিও প্রয়োজন। যেটা তৈরি করতে আরও সময় প্রয়োজন। শুধু সোশাল মিডিয়ায় নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখানোটা যথেষ্ট নয়। তাছাড়া বিহারের মতো বড়-জটিল রাজ্যে কোনও রাজনৈতিক দল দাঁড় করানোর জন্য ৩ বছর সময় যথেষ্ট নয়। ভুলে গেলে চলবে না প্রথমবার ক্ষমতায় আসার আগে লালুপ্রসাদ যাদব বহু বছর পরিশ্রম করেছিলেন। নীতীশ কুমার জীবনের প্রথম দুই নির্বাচনে নিজে হেরেও আশাহত হননি। প্রশান্ত কি আশাহত হবেন, নাকি নিজের ‘বিহার বদলাও’ অভিযান চালিয়ে যাবেন, সেটাই দেখার?