SIR প্রভাব নাকি ওয়েইসি ইমপ্যাক্ট, মুসলিম বহুল সীমাঞ্চলে সাফ আরজেডি-কংগ্রেস
প্রতিদিন | ১৪ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আরারিয়া, কাটিহার, কিষানগঞ্জ, পুর্ণিয়া। বাংলা লাগোয়া বিহারের এই চার জেলা একসঙ্গে সীমাঞ্চল নামে পরিচিত। বিহারের সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশ এই এলাকার বাসিন্দা। সীমাঞ্চলে মোট ২৪ আসন। অধিকাংশ আসনেই মুসলিম ভোট বড় ফ্যাক্টর। বিহারে মহাজোটের বড় ভরসার জায়গা ছিল এই সীমাঞ্চল এলাকা। কিন্তু ভোটের ফল দেখা গেল সীমাঞ্চল থেকে ধুয়েমুছে সাফ মহাজোট। পদ্ম ফুটেছে। নীতীশের তিরও কাজ করেছে। উড়েছে ওয়েইসির ঘুড়িও। কিন্তু আরজেডি-কংগ্রেসের হাতে হ্যারিকেন।
২০২০ সালে এই এলাকায় বড় শক্তি হিসাবে উঠে আসে AIMIM। পাঁচটি আসনে জেতে আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল। একাধিক আসনে দ্বিতীয় হয় তারা। মহাজোট এবং মিমের ভোট কাটাকাটিতে বিজেপি ৮ এবং জেডিইউ ৪ আসনে জিতে যায়। মহাজোটের তরফে কংগ্রেস পাঁচটি, বামেরা এবং আরজেডি একটি করে আসন জেতে। এবার এই ফলাফল বদলে যাবে বলে আশায় বুক বাঁধছিল বিরোধী শিবির। বিশেষ করে SIR-এর পর কংগ্রেস যেভাবে ভোটচুরি ইস্যুতে আসরে নেমেছিল, তাতে মুসলিম সমাজ তাদের সমর্থন করবে বলেই আশা করছিলেন হাত শিবিরের ভোট ম্যানেজাররা। কিন্তু এই প্রতিবেদন লেখা হওয়া পর্যন্ত সীমাঞ্চলের ২৪ আসনের মধ্যে মহাজোট শিবিরের প্রাপ্তি স্রেফ ১। টিমটিম করে কিষানগঞ্জ কেন্দ্রটিতে এগিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী। পাঁচ আসনে এগিয়ে ওয়েইসির দল মিম। বাকি সব আসনে জয়ী এনডিএ। নীতীশ কুমার অধিকাংশ আসনে এগিয়ে। বিজেপিও একাধিক আসনে এগিয়ে।
সোজা পাটিগণিত বলে, এই ফলাফলের কারণ SIR-এর পরে মুসলিম ভোট যেভাবে একত্রিত হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি। বরং তাছাড়া SIR-এ এই এলাকার সবচেয়ে বেশি ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। ফলে মহাজোটের ভোট এমনিতেও কমেছে। তাছাড়া সীমাঞ্চলের সংখ্যালঘুরা এনডিএর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভরসাই করতে পারেননি মহাজোটকে। তাঁরা ভরসা করছেন ওয়েইসিকে। অন্তত পাঁচ আসনে মিম এগিয়ে। একাধিক আসনে দ্বিতীয়। এবং একাধিক আসনে হারজিতের ফারাক গড়ে দিতে পারেন। ফলে ওয়েইসি যে বিরাট ইমপ্যাক্ট ফেলেছেন সেটা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়।
আসলে নিষাদ ও মাল্লা ভোটের আশায় ভিআইপি নেতা মুকেশ সাহানিকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করে মহাজোট। যা ব্যাকফায়ার করেছে। দুই শতাংশ ভোটের লোভে মাল্লা নেতাকে উপমুখ্যমন্ত্রী মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্ষোভ। ১৯ শতাংশ মুসলিম ভোট, অথচ মহাজোট কেন মুসলিম কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করল না, এই নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয় সংখ্যালঘু মনে। যা নিয়ে প্রচার শুরু করেন ওয়েইসিও। প্রশ্ন তোলেন, ১৩ শতাংশ যাদবদের প্রতিনিধি মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী, ২ শতাংশ মাল্লাদের প্রতিনিধি উপমুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী, আর ১৯ শতাংশ মুসলিম শুধু ভোটব্যাঙ্ক হয়ে থাকবে? এই প্রচারের ফায়দা তিনি পেয়েছেন। আর পেয়েছে এনডিএও। ভোট কাটাকাটির ফায়দা পেল বিজেপি-জেডিইউ। গোটা সীমাঞ্চলে কার্যত ধুয়েমুছে সাফ মহাজোট। অথচ, এই এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়ার কথা তাঁদের।
তবে শুধু সংখ্যালঘু ভোট কাটাকাটিকেই এই ফলাফলের কারণ হিসাবে দেখা যায় না। এক্ষেত্রে একটা বড় ফ্যাক্টর মুসলিম ভোটও। তিন তালাক প্রথা বাতিলের পরই মুসলিম মহিলাদের একাংশের ভোট বিজেপির দিকে যায়। এবার নীতীশ কুমার মহিলাদের জন্য ১০ হাজার টাকা করে ঘোষণা করার পর সেই মুসলিম মহিলাদের একটা বড় অংশের ভোট পেয়ে গিয়েছে জেডিইউ-বিজেপি। যার ফলে মহাজোটের কোনও সমীকরণই কাজ করেনি।