পূর্ব বর্ধমানে ৩০ শতাংশ ভোটারের নাম নেই তালিকায়! বিজেপিকে দুষছে তৃণমূল
প্রতিদিন | ১৪ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো : ২০০২ সালের নির্বাচন তালিকায় মিলছে না অসংখ্য ভোটারের তথ্য। এআইআরের ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন বহু বৈধ ভোটারও। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের দাবি, ২০০২ সালের তালিকা ঘিরে সমস্যা তৈরি হওয়ার পিছনে সুকৌশলে বৈধ ভোটারদের বাদ দেওয়ার অভিসন্ধি রয়েছে বিজেপির। ৩০ শতাংশের বেশি ভোটারের নাম নেই ২০০২ এর তালিকায়! ভোটার তালিকার সংযোজন প্রকাশ না করার জন্যই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে তারা। যদিও তৃণমূলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে, জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে ক্যাম্প করে সিটিজেন আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট বা সিএএর জন্য ফর্ম ফিলআপ শুরু করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় বিএলওরা ইতিমধ্যেই ৯৯ শতাংশ ফর্ম বিলি করার কাজ সম্পূর্ণ করেছেন। এদিন পর্যন্ত জেলায় মোট ৪১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৯২০ টি ফর্ম বিতরণ করা হয়েছে। যা মোট ভোটারের ৯৯.০৫ শতাংশ। কিন্তু, ২০০২ সালের তথ্য না মেলায় ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এই বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছে না রাজ্যের শাসকদল। ২০০২ সালে ভোটার হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ করা তালিকায় নাম না থাকা নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিসন্ধি রয়েছে বলে মনে করছে তারা। ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে ২০০২ সালের নির্বাচন তালিকায় নিজের বা পরিবারের সদস্যের নাম থাকা আবশ্যিক। নচেৎ ফর্ম ফিলাপ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
সেই হিসেবে ২০০২ সালের তালিকায় নাম খুঁজতে গিয়ে অনেকেই নাম পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। অথচ, তাদের অনেকের কাছেই ২০০২ সালের আগের ভোটার কার্ড রয়েছে। অর্থাৎ, তাঁরা ২০০২ সালের আগে থেকেই ভোটার হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে কী করণীয় সেই নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বর্ধমানের নীলপুরের শাল বাগান এলেকার বাসিন্দা পিকু ক্ষেত্রপাল। ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় তাঁর বাবা নাম পাওয়া যায়নি। অথচ তাঁর কাছে ২০০২ সালের আগে বাবার ভোটার কার্ড রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ফর্ম পুরন করতে সমস্যায় পড়েছেন তিনি।
তৃণমূল নেতা বাগবুল ইসলাম জানান, ‘‘নির্বাচন কমিশন ২০০২ সালের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে অনেকেই নাম খুঁজে পাচ্ছেন না। ২০০২ সালের নির্বাচনে যে সংযোজন তালিকা তৈরি হয়েছিল। সেই তালিকা প্রকাশ করেনি নির্বাচন কমিশন। সেই কারণেই অনেকের নাম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’’ অন্যদিকে, বর্ধমানে বিজেপির জেলা কার্যালয়ে সিএএর ফর্ম ফিলআপ শুরু হয়েছে। এদিন বিকেল পর্যন্ত ১৮টি আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা জানান, ‘‘নির্বাচন কমিশনের প্রক্রিয়ায় কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ যাবে না বলে সকলের বিশ্বাস আছে। তৃণমূল অবৈধদের তালিকাভুক্ত করার জন্যেই এই ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ২০০২ সালের তালিকায় ঘিরে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’’
এদিকে ট্রেনিং চলাকালীন এদিন কালনায় অসুস্থ হয়ে পড়লেন রিঙ্কু মজুমদার নামে এক মহিলা বিএলও। তিনি কালনার বাঘনাপাড়া মাজিদা এফপিএস স্কুলের শিক্ষিকা। প্রথম ১০ দিনে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ৮৬ শতাংশ ইনুমেরেশন ফর্ম বিলি করা হয়েছে। সংখ্যায় তা হল ২০ লক্ষ ১০ হাজার। এই জেলায় বিএলওদের ২৩ লক্ষ ২৭ হাজার ফর্ম বিলি করতে হবে। এদিন আসানসোলের কল্যাণপুরে পশ্চিম বর্ধমান জেলাশাসক কার্যালয়ে জেলাশাসক এস পোন্নাবলম একটি বৈঠক করেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘২০০২ ভোটার তালিকায় নাম থাকুক বা না থাকুক সকলকে এই ফর্ম পূরণ করতে হবে। যাতে তাঁর নাম ড্রাফট তালিকায় থাকে।’’