রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: আগামী বছর বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বিহার ভোট যেন সেমিফাইনালের মতো। কমপক্ষে বঙ্গ বিজেপি শিবিরের দাবি তেমনই। তাই বিহার জয়ের পরই ‘মিশন বেঙ্গলে’র ঘোষণা বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের। যদিও রাজ্যের শাসক শিবির, এসবে লাভ হবে না। উন্নয়ন অস্ত্রেই ফের কুপোকাত হবে বিপক্ষ।
শুক্রবার সকাল থেকেই বিহার নির্বাচনের ফলের দিকে নজর ছিল সকলের। বেলা বাড়তেই পরিষ্কার হয়ে যায়, বিরোধীদের পর্যুদস্ত করে হাঁকিয়ে ব্যাটিং করছে পদ্মশিবির। বিহারে জয়ের পথ প্রশস্ত হতেই ‘ধুঁকতে’ থাকা বঙ্গ বিজেপি শিবির যেন অক্সিজেন পায়। দলীয় কার্যালয়ের আশেপাশে বাজি ফাটিয়ে উচ্ছ্বাস শুরু হয়। হুঙ্কার শোনা যায়, শুভেন্দু-সুকান্তদের গলায়। এদিন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গ। বাংলা-বিহার-ওড়িশা। কলিঙ্গ মানে ওড়িশা হয়ে গিয়েছে। অঙ্গ বিহারও হল। এবার পালা বাংলার। বাংলার মানুষ নিশ্চয়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। বিহারের মতো বাংলার মানুষও জঙ্গলরাজ থেকে মুক্তি পেতে চান।” সুকান্তর হুঙ্কার নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করতেই নারাজ তৃণমূল। বাংলা এবং বিহারের রাজনৈতিক সমীকরণ মোটেও এক নয় বলেই মত তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের।
উল্লেখ্য, উনিশের নির্বাচনে বিজেপি বাংলা দখল করতে পারেনি ঠিকই। তবে দিলীপ ঘোষ নেতৃত্বাধীন বঙ্গ বিজেপি ফলাফল মোটের উপর ভালোই করেছিল। বেড়়েছিল আসন। তারপর থেকে দলের সমীকরণ বদলাতে থাকে। একসময়ে দলের ‘ফার্স্ট বয়’ দিলীপই যেন ‘ব্রাত্য’। তাঁকে না ডাকা হয় কোনও দলীয় অনুষ্ঠানে। আর না দেওয়া হয়েছে কোনও পদ। এমনকী একুশের নির্বাচনে নিজের সংসদীয় এলাকায় লড়ারও সুযোগ দেওয়া হয়নি তাঁকে। পরিবর্তে চক্রান্ত করে অন্য এলাকায় ভোটের টিকিট দেওয়া হয় বলেই অভিযোগ। বাংলায় একের পর এক নির্বাচনে তাই এখনও পর্যন্ত যেন ভরাডুবিই সঙ্গী বঙ্গ বিজেপি শিবিরের। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ঘর গোছাতে ব্যস্ত প্রত্যেক রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক মহলের মতে, ব্যতিক্রম যেন বঙ্গ বিজেপি। ভোট প্রস্তুতির বদলে ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ নিয়ে ব্যস্ত পদ্মশিবির। এখনও পর্যন্ত রাজ্য কমিটি গঠনের কাজও পড়ে রয়েছে। তার মাঝে একসময় বঙ্গ বিজেপি শিবির মনে করেছিল SIR অস্ত্রে হয়তো ঘায়েল করতে পারবে রাজ্যের শাসক শিবির তৃণমূলকে। বর্তমানে সেই ধারণার ভুলও ভেঙেছে। SIR অস্ত্রে আদৌ ভোটবাক্সে লাভ হবে কিনা, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, কার্যত ‘দিশাহারা’ পদ্ম শিবির আসন্ন বিধানসভা ভোটেও ‘হালে পানি’ পাবে না বাংলায়। পরিবর্তে উন্নয়নকে হাতিয়ার করে ফের মানুষের মন জয় করে বাংলা দখল তৃণমূল করবে বলেই আশা নেতৃত্বের।