• রোজগার যোজনায় ভর করেই বিরাট জয়? বিহারে NDA-এর সাফল্যে কাজ করেছে এই ৫ ফ্যাক্টর
    এই সময় | ১৪ নভেম্বর ২০২৫
  • সুনামি, ল্যান্ডস্লাইড নাকি বিধ্বংসী? এনডিএ-র বিপুল জয়কে কোন বিশেষণ দিয়ে ব্যাখ্যা করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। না, এখনও জয় ঘোষণা হয়নি। তবে সেটা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। দেওয়াল লিখন স্পষ্ট, আরও শক্তি বাড়িয়ে ফের ক্ষমতায় ফিরছে এনডিএ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কিসের জোরে এই বিপুল জয়? নেপথ্যে কাজ করছে কোন কোন ফ্যাক্টর?

    বিহারে ভোটের প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘দশ হাজারি চুনাভ হ্যায়, দুসরি তরফ কাট্টা সরকার হ্যায়।’ অর্থাৎ সোজাসুজি ‘জঙ্গলরাজের’ খোঁচা। বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডি আর এই দাগ মুছে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দুষ্কৃতী আর দুর্নীতির জোড়া ফলায় রীতিমতো চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছে তেজস্বীর দল। আর তার সঙ্গে মহাগঠবন্ধনেরও সমাধি হয়েছে। তবে এই বিপুল জয় এসেছে নিখুঁত ক্যালকুলেশনে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, জয়ের নেপথ্যে কাজ করেছে ‘ভাতা’-র খেলা। হ্যাঁ ‘খয়রাতির প্রকল্প’।

    বিহারের ভোটে মহিলা ভোটকে পাখির চোখ করেছিল দু’পক্ষই। তেজস্বীরা বছরে ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিজেপির তুরুপের তাস ছিল, ১০ হাজার। ১.৩ কোটি মহিলাকে ব্যবসা করার জন্য ১০ হাজার করে দেওয়া শুধু প্রতিশ্রুতি ছিল না, দিল্লি থেকে বিহারের ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’ প্রকল্পের সূচনা করে সেই টাকা অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েও দিয়েছিলেন মোদী। দুই দফা নির্বাচনেই ঢেলে ভোট দিয়েছেন মহিলারা। আর সেটা যে বিজেপি এবং এনডিএ-র দিকেই গিয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার ঢুকতেই নীতীশের প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করেছেন তাঁরা।

    প্রবীণদের মাসে ৪০০ টাকা করে ভাতা দেয় এনডিএ সরকার। ভোটের আগে তা একধাক্কায় বাড়িয়ে ১,১০০ টাকা করে দেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ঘোষণার পরেই নীতীশকে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেছিলেন বিহারের প্রবীণরা। তাঁদের মতে, নীতীশ যেহেতু সমসাময়িক, তাই তাঁদের দুঃখটা বুঝেছেন। যতই হোক, তিনি ‘সুশানবাবু’।

    বিনামূল্যে বিদ্যুৎ স্কিম কখনও খালি হাতে ফেরায়নি কাউকেই। দিল্লিতে বাজিমাত করেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বিহারেও এনডিএ-র ঘরেও আলো জ্বলল। ১২৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করে দিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। গ্রামীণ বিহারে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। গ্রামের এক বাসিন্দা বলেছিলেন, ‘আমাদের গরু, মোষও এখন পাখার নীচে ঘুমোয়।’

    আইনশৃঙ্খলা বড় ইস্যু ছিল বিহারে। ভোট ঘোষণার পর থেকেই পরপর খুনের ঘটনায় চাপে পড়ে গিয়েছিল নীতীশ সরকার। দিনদুপুরে পাটনায় শিল্পপতি গোপাল খেমকা খুন যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলার খামতি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একংশ বলছেন, সব ছেড়ে SIR নিয়ে পড়ে বিরোধীরা। ভোটচুরি নিয়ে সরব হন রাহুল গান্ধী। কিন্তু তা যে ভোটে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি, সেটা বলাই বাহুল্য। বেকারত্ব এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সরব হয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। কিছুটা সুবিধাও পেয়েছেন। কিন্তু সেই ভোট এক জায়গায় আসেনি। বিরোধীদের মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছে।

    প্রচারের সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কাট্টা, দুনালি, জঙ্গলরাজ। ভোটারদের মনে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, মহাগঠবন্ধন, তেজস্বীদের ফেরালে বিহারে ফের জঙ্গলরাজ ফিরে আসবে। দিনের আলোয় ঘুরে বেড়াবে দুষ্কৃতীরা। এই সুরেই সুর মিলিয়েছেন বিহারবাসী।

    এ বারের নির্বাচনে নীতীশও কামব্যাক করেছেন। সেটাও প্রবল ভাবে। ২০২০-তে ১১৫টি আসনে লড়ে ৪৩টিতে জিতেছিল জেডিইউ। ২০০৫-এর পরে সেটাই ছিল সবচেয়ে খারাপ ফল। পাঁচ বছরে তিনি বদলেছেন। বিজেপি এবং জেডিইউ ১০১টি করে আসনে লড়েছিল। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২টি আসনে এগিয়ে রয়েছে এনডিএ। তার মধ্যে বিজেপি এগিয়ে ৯২টি আসনে, জেডিইউ ৮৫টিতে। গত বারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভোটে জেতার ইঙ্গিত মিলছে। সকালে নীতীশের বাড়ির সামনে ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ পোস্টার এমনি এমনি পড়েনি। সত্যি এই জয়কে কোনও বিশেষণেই বোধহয় বাঁধা যায় না।

  • Link to this news (এই সময়)