• কাটোয়ায় মানসিক চাপে ভেঙে পড়লেন বিএলও’রা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৫ নভেম্বর ২০২৫
  • কাটোয়ার বিডিও দপ্তরে এসআইআর ফর্ম সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ চলাকালীন আচমকাই ক্ষোভ, আতঙ্ক এবং মানসিক চাপে ফেটে পড়লেন বিএলও-রা। প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত এক বিএলও হঠাৎ কাগজপত্র ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘আমি তো ভাবছিলাম গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে যাই, আমার চাকরির দরকার নেই।’ তাঁর বক্তব্যে শিবিরে থাকা অন্যান্য বিএলওরাও উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। সবাই মিলে তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।

    প্রসঙ্গত, এদিন প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিএলও’দের শেখানো হচ্ছিল কীভাবে বাড়ি বাড়ি ফর্ম সংগ্রহের পর মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তা আপলোড করতে হবে। কিন্তু ঠিক এখানেই দেখা দিয়েছে সমস্যা। নেটওয়ার্ক সমস্যা, অতিরিক্ত ভোটারসংখ্যা, অভিজ্ঞতার অভাব—সব মিলিয়ে বিরাট চাপ। বিএলওদের অভিযোগ, কাটোয়া বিধানসভা এলাকায় বহু গ্রামে মোবাইল নেটওয়ার্ক অতি দুর্বল। তাছাড়া একজন বিএলওকে ৬০০ থেকে ১০০০-এর বেশি ভোটারের ফর্ম সংগ্রহ ও তা আপলোড করতে হবে। অনেকেই অনলাইনে কাজ করতে অভ্যস্ত নন। ফলে চাপ সামলাতে না পেরে কেউ কেউ প্রকাশ্যেই অসহায়তা প্রকাশ করেছেন।

    বিএলওদের দাবি, তাঁরা ফর্ম সংগ্রহ করবেন। কিন্তু আপলোডের জন্য আলাদা ডাটা এন্ট্রি অপারেটর প্রয়োজন। এ নিয়ে প্রশাসনকে জানালেও কোনও সুরাহা হয়নি। অনেকে জানান, দিনের পর দিন বাড়তি চাপের ফলে তাঁরা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।

    বিএলও দেবাশিস দাস বলেন, ‘আমরা অসুস্থ থাকার পরেও কাজ করেছি। আমার পার্টে ১০৯৩জন ভোটার। এতগুলো ফর্ম আপলোড করতে হলে প্রচুর সময় লাগবে। বাড়িতে নেটওয়ার্কও ঠিক থাকে না। আমরা তো ডাটা এন্ট্রি জানি না।’ আবার বিএলও স্বরূপ চক্রবর্তী জানান, ‘আমরা অ্যাপস চালাতে পারি না। আপলোডের জন্য আলাদা কর্মী দেওয়া হোক।’ বিএলও অমিতকুমার দাসের বক্তব্য, ‘নেটওয়ার্ক নেই, অনেকেই অনলাইনের কাজ জানেন না। এত কম সময়ে এত কাজ করা অসম্ভব।’

    তবে এ বিষয়ে কাটোয়ার মহকুমাশাসক অনির্বাণ বসু জানান, ‘কমিশনের নির্দেশ মেনে আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। কেউ অসুস্থ হলে রিপোর্ট জমা দিন। মেডিক্যাল বোর্ড পরীক্ষা করে দেখবে। তার পর কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।’

    উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন ৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফর্ম বিলি এবং জমা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। বিএলওদের অভিযোগ, এত বড় কাজের জন্য সময় অপর্যাপ্ত। নির্বাচন কমিশনের এই সময়সীমাই মানসিক চাপ বাড়িয়েছে।

    তবে আপনার মধ্যে কখনও আত্মহত্যার চিন্তা মাথাচাড়া দিলে বা আপনার কোনও বন্ধু বা পরিচিত এই সমস্যায় জর্জরিত হন, তাহলে ভেঙে পড়বেন না। জানবেন, এমন কেউ আছে যে আপনার যন্ত্রণা, আপনার হতাশা ভাগ করে নিতে সদা-প্রস্তুত। আপনার পাশে দাঁড়াতে তৎপর স্নেহা ফাউন্ডেশনের সাহায্য পেতে দিনের যে কোনও সময়ে ০৪৪-২৪৬৪০০৫০ এই নম্বরে কল করুন। এছাড়া টাটা ইন্সটিটিউট অফ সোশাল সায়েন্সের হেল্পলাইন নম্বরেও ৯১৫২৯৮৭৮২১ কল করতে পারেন। এখানে ফোন করতে হবে সোমবার থেকে শনিবার, সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে ।

     
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)