• এসআইআর আতঙ্ক, আমবাড়িতে উদ্ধার বৃদ্ধের ঝুলন্ত দেহ
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৫ নভেম্বর ২০২৫
  • রাজ্যে ফের এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে শিলিগুড়ি সংলগ্ন আমবাড়ি এলাকায়। শুক্রবার সকালে এলাকার একটি গাছ থেকে এক বৃদ্ধের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পরিবারের সদস্যদের দাবি, মেয়ের নামে এনুমারেশন ফর্ম না আসায় আতঙ্কে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই বৃদ্ধ। দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। খবর পেয়ে মৃতের বাড়িতে এসে পরিবারকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়।

    মৃতের নাম ভুবনচন্দ্র রায় (৬০)। তাঁর বাড়ি জলপাইগুড়ির আমবাড়ির কামারভিটায়। তাঁর স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে। ৩–৪ দিন আগে বিএলও এসে তাঁদের বাড়িতে এনুমারেশন ফর্ম দিয়ে যান। বাড়ির বাকি সদস্যদের নামে ফর্ম এলেও ভুবনের মেয়ের নামে ফর্ম আসেনি। এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন তিনি। এবিষয়ে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর চিন্তা দূর হয়নি। এই আবহে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভুবনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাঁর খোঁজে গ্রামে শুরু হয় তল্লাশি। অবশেষে শুক্রবার ভোরে বাড়ির পাশের মাঠের একটি গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়।

    ভুবনের স্ত্রী সোমা রায় জানিয়েছেন, এর আগে তাঁদের মেয়ে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এনুমারেশন ফর্ম না আসায় দুশ্চিন্তায় ছিলেন ভুবন। এই আতঙ্কেই আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। দেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য দেহটি পাঠানো হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। খবর পেয়ে ভুবনের বাড়িতে আসেন রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়। বিজেপির দাবি, ভুবনের মেয়ের অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যাওয়ায় এলাকার ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটা গিয়ে থাকতে পারে।

    উল্লেখ্য, ২৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গ সহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এসআইআর–এর দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পর থেকে রাজ্যে প্রায় প্রতিদিনই আতঙ্কে মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এসেছে। এসআইআর ঘোষণার পর সর্বপ্রথম আত্মঘাতী হন পানিহাটির প্রদীপ কর। এরপর বীরভূমের ইলামবাজারের ক্ষিতীশ মজুমদার, টিটাগড়ের কাকলি সরকার, হাওড়ার উলুবেড়িয়ার জাহির মাল, মুর্শিদাবাদের কান্দির মোহন শেখ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের সফিউল গাজি, বহরমপুরের তারক সাহা সহ আরও অনেকে আত্মঘাতী হন।

    এসআইআর–এর কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় এক বিএলও–রও। এসআইআর আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে নদিয়ার তাহেরপুর থানার কালীনারায়ণপুর পাহাড়পুরের কৃষ্ণচকপুর মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা শ্যামল কুমার সাহা সহ আরও কয়েকজনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে, এসআইআর আতঙ্কে মেয়েকে কীটনাশক খাইয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন হুগলির ধনেখালির আশা সোরেন। এসএসকেএম হাসপাতালে ওই মহিলার মৃত্যু হয়। স্থিতিশীল রয়েছে তাঁর শিশুকন্যা। এসআইআর আতঙ্কে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জের বৃদ্ধ ওছমান মণ্ডল আত্মঘাতী হন। এদিনই রাতে নোয়াপাড়ায় আত্মহত্যা করেন টোটোচালক সুমন মজুমদার। এই তালিকায় যুক্ত হল আমবাড়ির ভুবনচন্দ্র রায়ের নাম।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)