• লালুপ্রসাদের ‘যদুবংশীয় গড়’ হাতছাড়া, টানাপোড়েনের পর স্বস্তির জয় তেজস্বীর
    বর্তমান | ১৫ নভেম্বর ২০২৫
  • পাটনা: ‘যব তক রহেগা সমোসে মে আলু, তব তক বিহার মে রহেগা লালু।’ বিহার রাজনীতির একদা এই মিথ আজ ভূলুণ্ঠিত! এমনকি ‘যদুবংশীয় গড়’ বলে পরিচিত আসনগুলি থেকেও সাফ আরজেডি। বারবার পিছিয়ে পড়ার পর পারিবারিক দুর্গ বলে পরিচিত মাধেপুর আসন কোনওক্রমে ধরে রাখতে পেরেছেন তেজস্বী যাদব। বিহারের রাঘোপুর কেন্দ্র থেকে জিতেছেন তেজস্বী। ২০২০-র নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ৩৮ হাজার ভোটে জিতেছিলেন তেজস্বী। তবে গনণার শুরুতে মনে হয়েছিল এবার তিনি হারবেন। শেষবেলায় পাশা পালটেছে। ১৪হাজারেরও বেশি ভোটে জিতেছেন তেজস্বী। হারিয়েছেন বিজেপির সতীশ কুমারকে। এই সতীশ কুমারই তেজস্বীর মা তথা রাবড়ি দেবীকে হারিয়েছিলেন। যদিও লালুর অপর (ত্যাজ্য) পুত্র তেজপ্রতাপ ধরাশায়ী মাহুয়া আসনে। দলের দুর্জয় ঘাঁটি বলে পরিচিত ভোজপুরের মতো অঞ্চলগুলিতেও হতশ্রী ফল করেছে আরজেডি। লালুপ্রসাদের দলের ইতিহাস বলছে, বিধানসভা আসনের নিরিখে এটাই তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। কিন্তু এই ‘নেই রাজ্যে’র মধ্যেও আশার আলো কি একেবারেই নেই? অবশ্যই আছে। আসন সংখ্যায় পাল্লা দিতে না পারলেও শতকরা প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে বিজেপি ও জেডিইউকে পিছনে ফেলে দিয়েছে আরজেডি। নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, লালু-তেজস্বী যাদবের দল পেয়েছে ২২.৭৯ শতাংশ ভোট। বিজেপির থেকে তা ২.২৭ শতাংশ বেশি। আবার মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জেডিইউয়ের থেকেও ৩.৮ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছে আরজেডি।

    আরজেডি এবার বিহারের ২৪৩টি আসনের মধ্যে ১৪৩টিতে প্রার্থী দিয়েছিল। ঝুলিতে এসেছে মাত্র ২৫টি। ২০১০ সালের পর থেকে এত খারাপ ফল তাদের আর হয়নি। সেবার আরজেডি জিতেছিল ২২টি আসনে। শুক্রবার ফল প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, এবারের বিধানসভা ভোটে ভোজপুর বেল্টের মতো শক্ত ঘাঁটিতেও মুখ থুবড়ে পড়েছে আরজেডি। এই এলাকাগুলিতে নজরকাড়া ফল করেছে এনডিএ শিবির। এই অঞ্চলের মোট ৪৬টি আসনের মধ্যে ৩৯টিই যাচ্ছে এনডিএ-র ঝুলিতে। মাত্র ছ’টি আসন ধরে রাখতে পেরেছে লালুর দল। যদিও পাঁচ বছর আগে ২০২০ সালের ভোটে এই অঞ্চলের সিংহভাগ আসন ছিল বিরোধী মহাজোটের দখলে।

    মধ্য বিহারে অবস্থিত এই ভোজপুর অঞ্চল বিহার রাজনৈতিক মানচিত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। মূলত গাঙ্গেয় সমতলভূমির এই অঞ্চল প্রায় প্রতি বছরই বন্যা সহ বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে। এই এলাকাতেই সিওয়ান, সন্দেশ, বরহারা, আরা, আগিয়াঁ, তারারি, জগদীশপুর, ছাপরা ও শাহপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা আসন রয়েছে। নজরকাড়া এই আসনগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সারন জেলার ছাপরা। এখানে তারকা ভোজপুরী অভিনেতা-গায়ক খেসারি লাল যাদব আরজেডির টিকিটে লড়ে হেরেছেন। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন হল সিওয়ান। এই আসনটি দীর্ঘদিন বাহুবলী রাজনীতির জন্য পরিচিত। এই আসনেও এবার হেরেছে আরজেডি। বিজেপি প্রার্থী তথা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গল পান্ডে এখানে হারিয়ে দিয়েছেন আরজেডির অবোধ বিহারী চৌধুরীকে। 

    তাহলে কি বিহারে লালু-মিথের চিরতরে অবসান হয়ে গেল? এমনিতে ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে বর্ষীয়ান এই নেতাকে এবার প্রচারে বিশেষ দেখা যায়নি। নীতীশের ‘সুশাসনবাবু’ ইমেজের সঙ্গেই লালুর দলকে ‘জঙ্গলরাজ’ প্রচারের বিরুদ্ধেও লড়তে হয়েছে। সশরীরে থাকতে না পারলেও লালু সদর্পেই থেকেছেন দলের পোস্টারে-ব্যানারে। আসনে রূপান্তরিত না হলেও আরজেডির সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তিই বলে দিচ্ছে, ‘সমোসে মে আলু’ স্লোগান বিহারে এখনও সমান শক্তিশালী।   
  • Link to this news (বর্তমান)