নীতীশ জোট ছাড়লেও সরকার থাকবে, স্বস্তিতে বিজেপি শিবির
বর্তমান | ১৫ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: বিজেপির সব স্বপ্নই সফল হচ্ছে। বিহারে নীতীশ কুমারের উপর নির্ভর করেই বিজেপি জোটের সরকার চালাতে হবে এমন আর নয়। এনডিএ জোটের সব শরিকদের প্রাপ্ত আসনের বিন্যাসে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি অন্য ছোট শরিকদের প্রাপ্ত আসন এমনই যে, নীতীশকুমার ছাড়া সরকার গড়া কিংবা রক্ষা করা যাবে না, সেই আশঙ্কা আর নেই। এই সংখ্যাগত স্বস্তিই বিহার ভোটে ২০২৫ সালে সবথেকে বড় প্রাপ্তি বিজেপির। বিপুল জয়ের পর দেখা যাচ্ছে বিজেপি এবং অন্য শরিকদের প্রাপ্ত আসন যোগ করলেই গরিষ্ঠতা হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ নীতীশকে ছাড়াই। আবার জোটের মধ্যেও বিজেপিই একক বৃহত্তম দল। সুতরাং জোটবদলে সিদ্ধহস্ত নীতীশ যদি ভবিষ্যতে কোনও ইস্যুতে সরেও যেতে চান এনডিএ থেকে, সরকার পতনের সম্ভাবনা নেই। বরং বিজেপির অঙ্ক হল, সেরকম কোনও প্রয়াস যদি নীতীশ কুমার করেন, তাহলে তাঁর নিজের দলের বড় অংশই বিজেপিতে চলে আসবে। সুতরাং এই চাপের রাজনীতি থেকে বিজেপির মুক্তি ঘটল। ২০২০ সালে ১১৫ আসনে প্রার্থী দিয়ে জেডিইউ পেয়েছিল ৪৩ আসন। এবার ১০১ আসনে প্রার্থী দিয়ে ৮৪। অর্থাৎ, প্রায় দ্বিগুণ। বিজেপিও প্রায়১৮ আসন বাড়িয়েছে। সবথেকে চমকপ্রদ ফলাফল চিরাগ পাসোয়ানের। ২৯ আসনে প্রার্থী দিয়ে ১৯ আসনে জয়। বিগত লোকসভা ভোটেও তিনি ৫ আসনে লড়াই করে ৫টিতেই জয়ী হয়েছিলেন। সুতরাং তাঁর স্ট্রাইক রেট সর্বোত্তম। একা তাঁর নয়। এনডিএ জোটের সকলের স্ট্রাইক রেটই ভালো। কিন্তু চিরাগের উত্থান রাজনৈতিক কূটনীতিতে বিজেপির জন্য বিশেষ সহায়ক। কারণ, নীতীশ কুমারের ক্ষুদ্র সংস্করণ আগামী দিনে চিরাগকে করতে পারবে বিজেপি। নীতীশ প্রবীণ। এখনও পর্যন্ত তিনি স্পষ্ট করেননি যে, তাঁর দলের উত্তরাধিকার কে হবে? পক্ষান্তরে চিরাগ পাসোয়ান তরুণ। তাঁর কাছে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ ভোট রয়েছে। মূলত পাসোয়ান ভোট। ২০০৫ সালেও নীতীশ কুমারের কাছে ছিল শুধুই কুর্মি ভোট। মাত্র আড়াই শতাংশ। কিন্তু তিনি ইবিসি কার্ড ব্যবহার করে পৃথক একটি অনগ্রসর গোষ্ঠী তৈরি করে সংরক্ষণ দিয়ে এক ধাক্কায় ইবিসি ও মুসলিম ভোটের একটি ভোটব্যাঙ্ক করে ফেলেছেন। বিহারের ভোটে শুধু জয় এলেই বিজেপি সন্তুষ্ট হত না। কারণ, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের আশঙ্কা ছিল, এবার নীতীশ কুমার যদি জোটের বৃহত্তম দল হতেন এবং বিজেপির বিগত নির্বাচনের তুলনায় আসন কমে যেত, তাহলে পুনরায় নীতীশের উপরই নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হত বিজেপিকে।
প্রশ্ন হল, বিহারে ২০২০ সালে ঠিক যে পরিমাণ ভোট আরজেডি জোট পেয়েছিল, সেটাই এবারও কমবেশি পেয়েছে তারা। অথচ ২০২০ সালে আরজেডি জোট পেয়েছিল ১১০ আসন। এবার মাত্র ৩৬। কেন? কারণ এই জোট নিজেদের আসন বাড়াতে পারেনি। বিজেপি জোটের ভোট শেয়ার প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। কীভাবে? প্রধানত দু’জনের সম্মিলিত যোগদানে। ২০২০ সালে চিরাগ পাসোয়ান পৃথক লড়াই করেছিলেন। তিনি এনডিএ জোটে ছিলেন না। এবার তিনি এই জোটে আছেন। সুতারং যুক্ত হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ ভোটব্যাংক। দ্বিতীয়ত নীতীশ কুমারের এবার ভোট শেয়ার এক ধাক্কায় ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ দুয়ে মিলে এখানেই ৮ শতাংশ অতিরিক্ত ভোট এসে গেল এনডিএ জোটের ঝুলিতে। আর বিজেপির ভোটবৃদ্ধি দেড় শতাংশ। সুতরাং প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে ৪৭ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে বিজেপি জোট।
এটা সম্ভব হয়েছে, নিখুঁত আসন সমঝোতায়। উচ্চবর্ণ, বানিয়া, নন যাদব-ওবিসির ভোটব্যাংকের জন্য বিজেপি রয়েছে। লব-কুশ (কৈরী-কুর্মী), ইবিসি ও মুসলিমদের একাংশের জন্য রয়েছেন নীতীশকুমার। কুশওয়া ভোটব্যাংক নিয়ে জোটে আছেন উপেন্দ্র কুশওয়া। পাসোয়ান ভোটের প্রায় সবটাই পেয়ে থাকেন চিরাগ পাসোয়ান। মুশহার সম্প্রদায়ের ভোটব্যাংক জিতনরাম মাঝির। এছাড়া সব জাতপাতের অঙ্ককে ছাপিয়ে নীতীশ কুমারের কোর ভোটব্যাংক মহিলা! ২০২৫ সালে এই প্রতিটি ফ্যাক্টর সফল হয়ে গিয়েছে। তাই এনডিএ দুশো পার! ছবি: পিটিআই