পাটনা: ২০২০ সাল। বিহারে কোভিড পর্বে বিধানসভা ভোট। আচমকা মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহী’ তরুণ তুর্কি এক শরিক নেতা। নীতীশের দলের বিরুদ্ধে সর্বত্র প্রার্থী দিয়ে শোরগোল ফেলে দিলেন। জেডিইউ প্রধানের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি কিন্তু ছিল তাঁর সম্পূর্ণ আনুগত্য। বললেন, ‘আমি মোদিজির হনুমান।’ জেডিইউয়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিলেও বিজেপির বিরুদ্ধে ময়দান খালি করে রাখলেন। ফল প্রকাশের পর দেখা গেল, ১৩০টির কিছু বেশি আসনে প্রার্থী দিয়ে জুটেছে মাত্র একটি। এহেন চিরাগ পাসোয়ানের রাজনৈতিক পরিপক্কতা নিয়ে পাঁচ বছর আগে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিরাপদ হাতে রয়েছে কি না, সেই চর্চা ছিল তুঙ্গে। ২০২১ সালে আসে নতুন ধাক্কা। দলের রাশ নিয়ে বিবাদে জড়ান কাকা পশুপতি কুমার পারসের সঙ্গে। লোক জনশক্তি পার্টি দু’ভাগ হয়। কিন্তু তখন কে জানত, এভাবেও ফিরে আসা যায়! ২০২৫ সালের ভোটের ফলে বিজেপি ও জেডিইউয়ের পাশে সমান উজ্জ্বল চিরাগের লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস)। গতবারের এক থেকে আসন সংখ্যা বেড়ে হল ১৯। তাও আবার মাত্র ২৯টি আসনে লড়ে। স্টাইক রেট ৬৫ শতাংশ। রামবিলাস-পুত্রের উপমুখ্যমন্ত্রীর হওয়ার জল্পনাও চরমে। চমকপ্রদ বই-কি!
চিরাগ যে বিহার রাজনীতির নয়া সেনসেশন হতে চলেছেন, সেই ইঙ্গিত মিলেছিল গত বছর লোকসভা ভোটের ফলেই। পাঁচটি লোকসভা আসনে লড়ে পাঁচটিতেই জয় পায় এলজেপি। স্ট্রাইক রেট ১০০ শতাংশ। কেন্দ্রে মন্ত্রী হন চিরাগ। তা সত্ত্বেও এবছরের বিধানসভা ভোটের আগে তাঁকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। দুই বড় শরিক বিজেপি ও জেডিইউয়ের সঙ্গে আসন নিয়ে বিস্তর দর কষাকষি করতে হয়। রাজ্যের ২৪৩টি আসনের মধ্যে ২০টির বেশি চিরাগকে ছাড়তে রাজি ছিল না কেউই। ফলে রামবিলাস-পুত্র কৌশলে ভাসিয়ে দেন, প্রশান্ত কিশোরের জনসুরাজ পার্টির সঙ্গে জোট গড়তে পারে তাঁর দল। শেষ পর্যন্ত এনডিএর দুই বড় শরিকের কাছ থেকে ২৯টি আসন ছিনিয়ে আনেন রামবিলাস-পুত্র। বিহারে লোক জনশক্তি পার্টির সবচেয়ে ভালো ফল হয়েছিল ২০০৫ সালে। রামবিলাসের নেতৃত্বে সেবার ২৯টি আসনে জিতেছিল তারা। কিন্তু পুত্র চিরাগের নেতৃত্বে এবারের ফল অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ সেবার ১৭৮টি আসনে লড়েছিল লোক জনশক্তি পার্টি। এবার লড়েছে মাত্র ২৯টি আসনে।
রাজনীতিতে পা দেওয়ার আগে অভিনয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করেছিলেন চিরাগ। ২০১১ সালে মুক্তি পেয়েছিলেন তাঁর অভিনীতি হিন্দি ছবি ‘মিলে না মিলে হাম।’ নায়িকা কঙ্গনা রানাওয়াত। ঘটনাচক্রে কঙ্গনাও এখন রাজনীতিতে, তিনি বিজেপি সাংসদ। কিন্তু এ তো গেল অভিনয় জগতের অতীত জীবন। এবার বিধানসভা ভোটে চিরাগের চকমপ্রদ ফলের পর তাঁর রাজনৈতিক লক্ষ্য কী? উপমুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার? চর্চা তুঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর এই অনুগত ‘হনুমান’কে কোন আসনে বসান, সেটাই এখন দেখার।