• জনসুরাজকে প্রত্যাখান বিহারের, নিজভূমে পর্যুদস্ত প্রশান্ত কিশোর
    বর্তমান | ১৫ নভেম্বর ২০২৫
  • পাটনা: ভোটকুশলী হিসেবে তিনি গত ৬ বছরে ৬ জনকে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেয়েছেন। চাণক্যের ভূমিকায় নেমে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ভোট-বৈতরণী পার করিয়েছেন। সেই প্রশান্ত কিশোর এবারের বিহার বিধানসভা ভোটে নিজের জনসুরাজ পার্টি (জেএসপি) নিয়ে ময়দানে নেমেছিলেন। এহেন ভারী বায়োডেটা থাকা ব্যক্তিকে ঘিরে প্রত্যাশাও ছিল বিপুল। কিন্তু, বাস্তবে খাতাই খুলতে পারলেন তিনি। শূন্য রানে আউট হয়ে গেলেন পিকে। বিহারের মোট ২৪৩টির মধ্যে ২৩৮ আসনে জেএসপি প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু, একটিতেও জিততে পারেনি। এর মধ্যে ২৩৩টি আসনেই জেএসপি প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। 

    প্রশান্ত কিশোরের এই পরাজয় কতটা শোচনীয়, তার একটা আভাস পাওয়া গিয়েছে নির্বাচন কমিশনের তথ্যে। কমিশনের পরিসংখ্যানে জেএসপির জায়গা হয়েছে ‘আদার্স’ বিভাগে। এই বিভাগের অন্তর্গত দলগুলির সম্মিলিত প্রাপ্ত ভোটের হার ১৩.৫ শতাংশ (মেরেকেটে ৩৫ লক্ষ ভোট)। সেই তুলনায় অনেক এগিয়ে বিহারের ‘বহিরাগত’ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি এআইএমআইএম এবং মায়াবতীর বহুজন সমাজবাদী পার্টি (বিএসপি)। ২৮ আসনে প্রার্থী দিয়ে ওয়েইসির দল ২ শতাংশ ভোট পেয়ে ৫টি আসনে জয়ী হয়েছে। অন্যদিকে ১৮১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিএসপি দেড় শতাংশ ভোট পেয়ে একটি আসন জিতেছে। 

    এখানেই শেষ নয়। পিকে যে জেলার ভূমিপুত্র, সেই রোহতাসেও মুখ থুবড়ে পড়েছে তাঁর দল। এই জেলার সাতটি বিধানসভা আসনেই জেএসপি প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত। পিকে’র নিজের বিধানসভা কেন্দ্র করগহরে তাঁর দল পেয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ ভোট। অথচ বেশ ধুমধাম করেই রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন প্রশান্ত কিশোর। ২০২২ সালের মে থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা করে বিহারের গ্রামে-গ্রামে ঘুরেছিলেন। বিহারের রাজনীতিতে এনডিএ বনাম মহাজোটের একচেটিয়া লড়াইয়ে তৃতীয় বিকল্প হিসেবে নিজেকে এগিয়ে দিয়েছিলেন পিকে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এবারের ভোটে প্রশান্তর নিজে প্রার্থী না হওয়াটা তাঁর পরাজয়ের নেপথ্যে বড় ফ্যাক্টর। পিকে বরাবরই বলেছেন, তিনি স্বচ্ছ্ব রাজনীতির পক্ষে। অথচ এডিআর-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, জেএসপির ১০৮ জন (প্রায় ৪৫ শতাংশ) প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মামলা রয়েছে। এরমধ্যে ১০০ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ।

    নির্বাচনের আগে গত কয়েকমাস ধরে একাধিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন পিকে। ভোটে জেএসপির সাফল্য নিয়ে বলেছিলেন, ‘আরশ পে ইয়া ফারস পে’। যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়— হয় আকাশে থাকব, না হয় মাটিতে আছড়ে পড়ব। নিয়তির পরিহাস এমনই যে প্রশান্তর সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে দিয়েছে ভোটের ফল। 
  • Link to this news (বর্তমান)