নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: শুধুই ভাইটাল ইনস্টলেশন নয়। হামলা হবে সফট টার্গেটেও। তুরস্ক ব্লু-প্রিন্ট ছিল এরকমই। দিল্লি বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত মেডিকেল মডিউলের প্রধান দুই সদস্য ডাঃ উমর নবি এবং মুজাম্মিল ২০২২ সালে যখন তুরস্ক গিয়েছিল, সেই সময় এবং পরবর্তীকালেও তাদের কাছে নির্দেশ আসে—লালকেল্লা, ইন্ডিয়া গেটের মতো রাজধানীর সবথেকে হাই সিকিওরিটি জোনেও বিস্ফোরণের পাশাপাশি হাসপাতাল, বিমানবন্দর এবং বহুজাতিক সংস্থার অফিস বিল্ডিংকে তালিকাভুক্ত করতে হবে। তার থেকেই গোয়েন্দারা আন্দাজ করছে, এই টার্গেট হতে পারে গুরুগ্রাম, নয়ডা, মুম্বই ও বেঙ্গালুরুর মতো হাই প্রোফাইল শহরের কর্পোরেট হাব। যেখানে বিভিন্ন বহুতল বিল্ডিংয়ে বহুজাতিক সংস্থার দপ্তর রয়েছে। এনআইএ, দিল্লি পুলিশ ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, আফগানিস্তান ও তুরস্ক থেকে এসেছিল এই ‘নির্দেশিকা’। কেন এই টার্গেট? এই মেডিকেল মডিউলের লক্ষ্যই ছিল অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা, আর্থিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি। কারণ বহুজাতিকের উপর হামলা হলে আন্তর্জাতিক মহল তোলপাড় হয়ে যাবে। এছাড়া হাসপাতালের মতো সফট টার্গেট তো রয়েইছে। এই ব্লু-প্রিন্টকে বাস্তব রূপ দিতে পারলেই ইন্টারন্যাশনাল শক তৈরি হবে। অর্থাৎ, ২০০৮ সালে মুম্বই হামলায় যেমন বিশ্বজুড়ে আলোড়ন উঠেছিল, তেমন কিছু। আর এই ইনপুট পেয়েই তদন্তকারীদের সন্দেহ হচ্ছে, বিদেশি পর্যটক অথবা নাগরিকরাও সম্ভবত ছিল নিশানায়। বহুজাতিক সংস্থা, হাই প্রোফাইল হাসপাতাল এবং বিখ্যাত পর্যটন স্থলে যাঁদের পাওয়া সম্ভব। দিনের পর দিন দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার চারটি হাসপাতালে গিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেকি করে এসেছিল এই টিমের কয়েকজন সদস্য।
তদন্তকারীরা জানতে পারছেন, দিল্লি বিস্ফোরণে আই-২০ গাড়ির চালক ডাঃ উমর নবি এবং আগেই গ্রেপ্তার হওয়া মুজাম্মিল তিন বছর আগে যখন তুরস্কে গিয়েছিল, তখন আগে থেকেই সেখানে হাজির ছিল উকাসা নামে এক ব্যক্তি। জয়েশ-ই-মহম্মদের এজেন্ট। উকাসা কিন্তু কোডনেম। এর অর্থ, মাকড়সা। আফগানিস্তান থেকে এসেছিল হাশিম। প্রকৃতপক্ষে কাশ্মীরের বাসিন্দা। আফগানিস্তানে চলে যায় সে। এবং তৃতীয় ব্যক্তি, এক উদ্বাস্তু। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ চলাকালীন পালিয়ে আসে সে তুরস্কে। এই তিনজনের সঙ্গে দেখা করেছিল মুজাম্মিল। ১৩ দিন ছিল তাদের সঙ্গে। কয়েকদিন উমরের সঙ্গেও হয় বৈঠক। তারপর যোগাযোগ রয়ে যায় সিগন্যাল অ্যাপে।
২০২২ সালে ওই তুরস্ক সফরেই স্থির হয়েছিল, প্রথম আঘাত হবে লালকেল্লায়। প্ল্যান ছিল, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা স্টাইলে গাড়ির মধ্যে বিস্ফোরক রেখে কোনও ‘টার্গেট এলাকা’য় ঢুকে পড়ে বিস্ফোরণ ঘটানো। সেই প্ল্যানও এখন মাথাব্যথা পুলিশের। উপরন্তু ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ১৭ নম্বর বিল্ডিংয়ের ৪ নম্বর ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছে একটি ডায়েরি। সেখানে রয়েছে দু’টি এন্ট্রি। ৮ নভেম্বর। ১২ নভেম্বর। রয়েছে ২৫টি নাম। তবে সবই কোডনেম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্র বলেছে, এই সন্ত্রাস মডিউল নিজেদের ট্র্যাক রেকর্ড, ক্ষমতা এবং নেটওয়ার্কের তুলনায় অনেক বড় এবং ভয়ঙ্কর প্ল্যান করেছিল। যা পুরোদস্তুর টেরর নেটওয়ার্কের পক্ষেই সম্ভব। কিন্তু এই বৃহৎ প্ল্যান ও ব্লু-প্রিন্ট তারা করেছিল কীসের জোরে? ভারত, তুরস্ক, আফগানিস্তান, সিরিয়া... তাহলে কি প্যান এশিয়া সন্ত্রাসের রেডারে ভারত?