• এসআইআরে বাদ পড়া প্রায় ৬ লক্ষ নামই কি সীমাঞ্চলের টার্নিং পয়েন্ট?
    বর্তমান | ১৫ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পার্টি অফিসে ঢুকলেন, পুষ্পবৃষ্টিতে স্নান করলেন এবং উত্তরীয়টিকে গামছা স্টাইলে মাথার উপর ঘুরিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি বিহারের পালস বোঝেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই পালস তিনি ঠিক কবে থেকে বুঝেছেন? বিহারে এসআইআরের সিদ্ধান্ত যেদিন ঘোষণা হল, সেদিন থেকে? এই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে সীমাঞ্চল। অর্থাৎ, বিহারের আরারিয়া, কাটিহার, কিষানগঞ্জ এবং পূর্ণিয়া জেলা। সবই বাংলা লাগোয়া। মোট আসন সংখ্যা ২৪। বিহারের সংখ্যালঘু জনসংখ্যার বেশিরভাগটাই এখানকার বাসিন্দা। গত কয়েকটা ভোটের নিরিখে বিরোধী মহাজোটের শক্তিস্থল। কিন্তু এবারের নির্বাচনের পর দেখা যাচ্ছে, গোটা সীমাঞ্চল থেকে বিরোধীরা ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। একপ্রকার গেরুয়া বিপ্লব বললেও ভুল বলা হবে না। কারণ কী? ১০ হাজার টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাওয়া মহিলাদের ভোট? বিকাশ? জাতিগণনা? নাকি এসআইআর? শেষ সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সীমাঞ্চলে পাঁচ বছর আগে বিজেপি এবং জেডিইউয়ের মোট আসন সংখ্যা ছিল ১২টি। বিজেপি আট এবং নীতীশ চারটি। এবার দেখা যাচ্ছে, এনডিএ দু’টি আসন বাড়িয়ে নিয়েছে। আসাদউদ্দিন ওয়েইসি গতবার পাঁচটি আসন পেয়েছিল। এবারও তাই। অর্থাৎ, বিপর্যয় হয়েছে আরজেডি (১) এবং কংগ্রেসের (৪)। সীমাঞ্চল ছাড়া এসআইআরে সবথেকে বেশি ১২ শতাংশ নাম বাদ যাওয়া গোপালগঞ্জ জেলার ৬টি আসনের সবক’টিই জিতেছে এনডিএ। এখানেও তারা বাড়িয়েছে দু’টি আসন। ফলে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, এটা এসআইআর এফেক্ট নয় তো?

    অর্থাৎ, হিসেবটা হল এই গোটা এলাকার ৩০টি আসনের মধ্যে ২০টিরই দখল নিয়েছে এনডিএ। পাঁচটি মিম। মহাগঠবন্ধন নেমে গিয়েছে পাঁচটিতে। কিষানগঞ্জে ৬৮ শতাংশ মুসলিম ভোটার। তাই ৯.৬৯ শতাংশ নাম এসআইআরে বাদ গেলেও কংগ্রেসের ভোটব্যাংকে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। কিষানগঞ্জ আসনে জয়টাই তার প্রমাণ। কিন্তু কাটিহারে ৪৪ শতাংশ মুসলিম ভোটারের মধ্যে ৭.১২ শতাংশ নাম বাদ যাওয়ায় ফল কিন্তু ঘুরে গিয়েছে। ছ’টি কেন্দ্রের সবই জিতেছে বিজেপি। কাটিহার বিধানসভা কেন্দ্রেই বিজেপি জিতেছে ২২ হাজার ব্যবধানে। পূর্ণিয়ার মুসলিম ভোটার ৩৮ শতাংশ। আর এখানে বাদ গিয়েছে ৮.৪১ শতাংশ নাম। এই জেলাতেও ভোটের সুফল কুড়িয়েছে গেরুয়া বাহিনী। 

    অঙ্কটা স্পষ্ট—ভোটার তালিকা শুদ্ধকরণের পর সীমাঞ্চলে বাদ গিয়েছে মোট ৫ লক্ষ ৮৪ হাজার ৫১৮ নাম। অর্থাৎ, গড়ে প্রত্যেক আসন থেকে ২৩ হাজারের কাছাকাছি। আর ফল বলছে, নরপটগঞ্জ, সিকটি, কাটিহার, কাদওয়া, কোরহা, বৈকুণ্ঠপুরের মতো আসনে এনডিএর জয়ের ব্যবধান ১৮ থেকে ২৪ হাজার। রানিগঞ্জ, ঠাকুরগঞ্জ, কসবা, প্রাণপুর, ভোরে, হাথুয়ার মতো কেন্দ্রে ব্যবধান ৮ থেকে ১৩ হাজার। বলরামপুরে তো চিরাগ পাসোয়ানের দল জিতেছে মাত্র ৩৮৯ ভোটে। ফরবেশগঞ্জেও কংগ্রেস হার বাঁচিয়েছে মাত্র ২২১ ভোটে। ফলে পরিসংখ্যানই বলছে, বিহার ভোটে এসআইআরের প্রভাব আছে... বিপুল জয়ের পরও।
  • Link to this news (বর্তমান)