অন্যের নথি নিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারকদের ভাড়া, পান্ডা সহ গ্রেফতার ২
বর্তমান | ১৫ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার নাম করে জোগাড় করত নথি। সেই নথি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হলেও পাশবই, চেকবই বা এটিএম কার্ড কিছুই পৌঁছত না গ্রাহকের কাছে। তার আগেই পোস্ট অফিসের ডাকসেবকদের ম্যানেজ করে তুলে নিত তারা। এরপর ওই অ্যাকাউন্ট ভাড়া দেওয়া হতো সাইবার জালিয়াতদের। চক্রের অন্যতম পান্ডা সমীর সামন্তকে হুগলির বৈঁচির ফ্ল্যাট থেকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গ্রেফতার করেছে বড়বাজার থানা। ধরা হয়েছে তার সহযোগী সঞ্জয় বেশরাকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর পাশবই, চেকবই ও মোবাইলের একাধিক সিম কার্ড।
কয়েকদিন আগে বড়বাজার থানা এলাকার একটি ব্যাংকে আরটিজিএসের টাকা জমা পড়ে। অ্যাকাউন্টের লেনদেন দেখে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। তারা তদন্তে নেমে দেখে অ্যাকাউন্টটি সঞ্জয় বেশরা নামের এক ব্যক্তির। তাঁর ওই অ্যাকাউন্টে প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত লক্ষ টাকা লেনদেন হচ্ছে। ব্যাংকের নথি ঘেঁটে সঞ্জয়ের ঠিকানা হাতে আসে পুলিশের। তাঁকে গ্রেফতার করার পর তদন্তকারীরা জানতে পারেন, এই অ্যাকাউন্টটি দেখভাল করে সমীর সামন্ত নামের এক ব্যক্তি। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় তাঁর কাছ থেকে নথি নিয়েছিল সমীর। কিন্তু তারপর তাঁকে ব্যাংকের কোনও কাগজপত্র আর দেয়নি সে। তবে প্রতিমাসে তিনি যে সমীরের কাছ থেকে মোটা টাকা পেতেন, তা স্বীকার করেছেন সঞ্জয়। তিনিই জানান, সমীর বৈঁচিতে থাকে। সেখানে বৃহস্পতিবার রাতে হানা দিয়ে এই চক্রের মাথাকে পাকড়াও করে পুলিশ। সমীর সামন্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে এক সাইবার জালিয়াতের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই প্রতারক বলে, অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিলে মোটা টাকা কমিশন পাওয়া যাবে। এই টোপে পা দিয়ে অল্প শিক্ষিত বা নিরক্ষর গ্রামবাসীর সঙ্গে ভাব জমিয়ে সমীর বলত, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে হলে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা দরকার। এই কাজে প্রয়োজনে সে সাহায্য করতে পারে। এভাবেই নথি চেয়ে নিত সে। এরপর সেগুলি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলত। ওই নথিকে কাজে লাগিয়েই তুলত সিম কার্ড। সেগুলির নম্বর ব্যাংকের ওই অ্যাকাউন্টে লিংক করা থাকত। নথিতে থাকা ঠিকানা দেখে সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিসে কর্মরত ডাকসেবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করত অভিযুক্ত। কারণ পোস্ট অফিসের মাধ্যমেই ব্যাঙ্কের সমস্ত নথি যায়। ডাকসেবকদের ম্যানেজ করে সেখান থেকে পাশবই, চেকবই ও এটিএম কার্ড হাতিয়ে নিত। এই অ্যাকাউন্টগুলি ভাড়া দিত সাইবার জালিয়াতদের কাছে। এখানে জালিয়াতদের টাকা জমা পড়ত। পরে তা আবার অন্য অ্যাকাউন্টে চলে যেত। তদন্তে উঠে এসেছে, এক একটি অ্যাকাউন্টে আট থেকে দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। পাশাপাশি অন্যের নথি দিয়ে তোলা সিম বিক্রি করত জালিয়াতদের। এই রাজ্য সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেসব সাইবার প্রতারকদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। একইসঙ্গে সেই ডাকসেবকদেরও খোঁজ চলছে।