বিরোধী জোটে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য কি রাহুল, ফের উঠল প্রশ্ন
প্রতিদিন | ১৫ নভেম্বর ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার, নয়াদিল্লি: কমজোর কড়ি কৌন… নতুন সহস্রাব্দের শুরুর দিকে ভারতীয় টেলিভিশনে বেশ কিছু রিয়ালিটি শো বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। যার মধ্যে ছিল নীনা গুপ্তার সঞ্চালনায় হওয়া এই শো। সেখানে অংশ নেওয়া প্রতিযোগীরা দলবদ্ধ হয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগোলেও প্রতি রাউন্ডের শেষে এমন একজনকে চিহ্নিত করতেন, যাঁর জন্য আরও বেশি মূল্য জেতা গেল না। বিহার নির্বাচনের ফল পর্যালোচনায় যেন সেই পুরনো কাসুন্দি পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। এতদিন পক্ষে বিপক্ষে নানা যুক্তি-তর্ক থাকলেও বিহার নির্বাচনের পর আর বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না যে, বিজেপি বিরোধী মহাজোটে কমজোর কড়ি কৌন। নিঃসন্দেহে এই ভূমিকা পালন করছে দেশের প্রাচীনতম ও সাংসদদের সংখ্যার ভিত্তিতে দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল, কংগ্রেস।
বিভিন্ন বিরোধী দল থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ প্রত্যেকেই কার্যত এক সুরে বলছেন, ‘ইন্ডিয়া’-তে কংগ্রেস এখন বড় বোঝা ও দায়বদ্ধতা হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই বিরোধী মহলে শুরু হয়েছে ফিসফাস। বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে যাদের সাফল্য আছে, তাদেরই নেতৃত্বে সামনে আনতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এই প্রসঙ্গে জানান, “কংগ্রেস যে বিজেপি বিরোধিতায় ব্যর্থ, সেটা আবার প্রমাণিত এবং বারবার প্রকট। তারা না পারে জিততে, না পারে জেতাতে। দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেস আদৌ নেতৃত্ব দেওয়ার জায়গায় আছে কি না, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। বিকল্প ভাবার সময় এসেছে।” শুধু কংগ্রেস নয়, প্রশ্নের মুখে কংগ্রেসের রিমোট হাতে বসে থাকা রাহুল গান্ধীর ভূমিকা নিয়েও। নির্বাচনের আগে তেজস্বী যাদবকে সঙ্গে নিয়ে বিহারে ভোটার অধিকার যাত্রা করেছিলেন রাহুল।
সাসারাম থেকে পাটনা পর্যন্ত যে যে পথে গিয়েছে রাহুলের সেই যাত্রা, তাতে বাল্মীকি নগর, কিসানগঞ্জ ও মনিহারি ছাড়া প্রতিটি আসনেই হেরেছে কংগ্রেস। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজেপি ও জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধীর ভোট চুরির অভিযোগ আদৌ দাগ কাটতে পারেনি বিহারিদের মনে। কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছে এআইএমআইএম-ও। ভোটের আগে বিরোধী জোটে শামিল হতে চান তিনি। কিন্তু কংগ্রেস তা খারিজ করে দেয়। ফলে ভাগ হয়েছে সংখ্যালঘু ভোট।
মিম এদিন বলেছে, “কংগ্রেস ভোট কাটুয়া পার্টি। ওরা বিজেপি বিরোধী ভোট কেটে দিয়ে বিজেপির সুবিধা করে দেয় সব জায়গায়।” অতীতে বিভিন্ন বিরোধী দল বারবার বলে এসেছে, দাদাগিরি ছেড়ে দিয়ে কংগ্রেসকে বাস্তব বুঝতে হবে। যেখানে যে দল শক্তিশালী, সেখানে তাকেই গুরুত্ব দিতে হয়। এবারও যদি এই রূঢ় বাস্তব কংগ্রেস বুঝতে না চায়, তাহলে উটপাখির বালিতে মুখ গুঁজে রাখার মতোই অবস্থা হবে। শুধু স্থানীয় স্তরে আঞ্চলিক দলের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়াই নয়, সময় এসেছে নেতৃত্বের ব্যাটন নিজেদের হাত থেকে ছেড়ে দেওয়ার। অনেকেই মনে করছেন, নির্বাচনের ফলাফলে বারবার প্রমাণিত হয়েছে, বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিতে যোগ্যতম ব্যক্তির নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ধারেকাছে আসা তো দূর, এখনও এম কে স্ট্যালিন, হেমন্ত সোরেনদের সমকক্ষও হয়ে উঠতে পারেননি রাহুল।