এসআইআর আতঙ্ক, দত্তপুকুরে মৃত্যু হল ৭০ বছরের বৃদ্ধের
আজকাল | ১৫ নভেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্যে ফের এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। বাংলায় এসআইআর চালু হওয়ার পর থেকেই বেশ কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বাংলায়।
জানা যাচ্ছে, এসআইআর আতঙ্ক থেকেই শনিবার দত্তপুকুর থানার পশ্চিম খিলগাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাটুরিয়া এলাকার বাসিন্দা জিয়ার আলী নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। ওই ব্যক্তির বয়স ৭০ বছর।
পরিবারের তরফে অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এসআইআর ফর্ম ফিল আপ করা নিয়ে মানসিক আতঙ্কে ভুগছিলেন ওই বৃদ্ধ। গত ১৩ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। পরিবারের তরফে তাঁকে তড়িঘড়ি বারাসাত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কিন্তু সেখানে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পরবর্তী কালে কলকাতার একাধিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। কিন্তু তারপরেও শেষরক্ষা হয়নি। শনিবার ভোরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
এসআইআর আতঙ্কে রাজ্যের মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে, ৬ নভেম্বর জানা যায়, এসআইআর আতঙ্কে মুর্শিদাবাদ জেলায় ফের আত্মঘাতী হন এক ব্যক্তি।
বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ বহরমপুর থানার অন্তর্গত গান্ধী কলোনী এলাকায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হলেন এক ব্যবসায়ী। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই ব্যক্তির নাম তারক সাহা (৫৪)।
এদিন দুপুরে দোকান থেকে বাড়ি ফিরে এসে একটি গাছের সঙ্গে গামছার ফাঁস গলায় বেঁধে ঝুলে আত্মঘাতী হন ওই ব্যক্তি। খবর পেয়ে বহরমপুর থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গান্ধী কলোনীর বাসিন্দা পেশায় ঝালমুড়ি বিক্রেতা তারক সাহার ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম ছিল না। এই কারণে গত বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি আতঙ্কে ভুগছিলেন।
তারকবাবুর প্রতিবেশী অপু বিশ্বাস বলেন, ‘গতকাল বিকেলে আমার সঙ্গে যখন তারকের দেখা হয় তখন সে কেঁদে ফেলে। তারক আমাকে বলেছিল তাঁর বাবা-মায়ের মৃত্যু হয়েছে এবং তাঁদের যথাযথ কোনও নথি নেই। তাঁর এক মামা বহরমপুরের কান্তনগরে থাকলেও তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল না থাকায় সে প্রয়োজনীয় নথি পাচ্ছিল না।’
প্রসঙ্গত, গত ৪ অক্টোবর রাজ্য জুড়ে এসআইআর শুরু হওয়ার পর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ জেলার মোট চার জন ব্যক্তির এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ।
মৃতদের মধ্যে দু’জন আত্মঘাতী হয়েছেন এবং দু’জন দুশ্চিন্তায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে মৃতদের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন। গত ৫ নভেম্বর এসআইআর আতঙ্কে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ভাঙড়ে।
জয়পুর এলাকার বাসিন্দা সফিকুল গাজি (৩৫) এসআইআর আতঙ্কে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। তাঁরা স্ত্রী জানান, গত কয়েক দিন ধরে আতঙ্কে ছিলেন স্বামী।
বার বার বলছিলেন, তাঁর কোনও পরিচয়পত্র নেই। ভাই-বাপ কেউ নেই। কী হবে! স্ত্রী বার বার সাহস দেওয়ার চেষ্টা করলেও বুধবার সকালে এই ঘটনা ঘটল। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,ভাঙড়ের জয়পুরে সফিকুল গাজি নামে এক ব্যক্তি গলায় গামছার ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, এসআইআর-এর বিষয়টি ঘোষণার পরেই সফিকুল আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এই প্রসঙ্গে শওকত মোল্লা বলেন, ‘আমি শুনেছি ওর বাবা-মায়ের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। যেখানে বাড়ি, সেখানে কাগজ রয়েছে। কিন্তু ওর নিজের কোনও কাগজ নেই। জমি-জায়গারও দলিল নেই। সেই হতাশা থেকেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। বিজেপিকে এর জবাব দিতে হবে। বিজেপিকে এই মৃত্যু মিছিলের দায় নিতে হবে।এর জন্য সাইবার ক্যাফেতেও সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা গিয়েছে। তবে নথি না জমা দিলে দেশ ছাড়া হতে হবে, এই ভয়ে রয়েছেন অনেকেই। আর সেই কারণেই গত কয়েক দিনে অনেক মানুষের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। সব ক’টিতেই পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, এসআইআর-এর কারণেই মৃত্যু হয়েছে।’
বিহারের পর বাংলাতেও চালু হয়েছে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর প্রক্রিয়া। যার জেরে অনেকের মধ্যেই আতঙ্ক লক্ষ্য করা গিয়েছে।
অনেকেই ইতিমধ্যে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নিজের নাম খোঁজার পাশাপাশি এই সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি জোগাড় করছেন। এর জন্য সাইবার ক্যাফেতেও সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা গিয়েছে।
নথি না জমা দিলে দেশ ছাড়া হতে হবে, এই ভয়ে রয়েছেন অনেকেই! সম্প্রতি রাজ্য জুড়ে কয়েকটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, এসআইআর-এর কারণেই মৃত্যু হয়েছে।