এসআইআর ‘আতঙ্কে’ হৃদরোগে মৃত্যু প্রৌঢ়ের, চাঞ্চল্য দত্তপুকুরে
প্রতিদিন | ১৫ নভেম্বর ২০২৫
অর্ণব দাস, বারাকপুর: এসআইআর আতঙ্কে ফের মৃত্যুর অভিযোগ বাংলায়। এবার ঘটনাস্থল দত্তপুকুর থানার পশ্চিম খিলকাপুর পঞ্চায়েতের চাটুরিয়া গ্রাম। সেখানের বাসিন্দা বছর সত্তরের জিয়ার আলির নাম ২০০২সালের ভোটার তালিকায় থাকলেও তাতে ছিল না এপিক নম্বর। ফলে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করতে পারবে কি না, এনিয়ে দুশ্চিন্তায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শনিবার মৃত্যু হল তাঁর। পরিবার এনিয়ে সরব হতেই চাপা উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম খিলকাপুর পঞ্চায়েতের চাটুরিয়া গ্রামেই জন্ম হয় পেশায় ইটভাটার কর্মী জিয়ার আলির। গ্রামের পৈতৃক বাড়িতেই থাকতেন তিনি। তাঁর চার ছেলে এবং এক মেয়ে। পরিবারের দাবি, লোকসভা, বিধানসভা-সহ পঞ্চয়েতেও সকল নির্বাচনের ভোট দিয়েছেন তিনি। এরইমধ্যে এসআইআরের কাজ শুরু হতেই ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নিজের নাম থাকলেও এপিক নম্বর না থাকায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন জিয়া। দিন কয়েক আগে এনুমারেশন ফর্ম পেয়ে এপিক নম্বর না থাকায় ফর্ম পূরণ নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তায় আরও বাড়ে। তাই ফর্ম জেরক্স করে ১৩ বার পূরণ করে এপিক নম্বর লেখার জায়গায় কি লিখবেন, তা নিয়ে পরিবার পরিচিতদের বারবার দেখিয়েছিলেন তিনি। এসআইআরে দেশ ছাড়া হওয়ার আতঙ্কের কথাও ছেলেদের জানিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। সেই আতঙ্ক থেকেই বৃহস্পতিবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন।
প্রথমে একে বারাসত সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রেফার করা হয় আরজিকর হাসপাতালে। সেখানেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় জিয়ার আলিকে রেফার করা হয় এন আর এস হাসপতালে। সেখানেই এদিন সকালে মৃত্যু হয় জিয়ার আলির। তাঁর ছেলে সইদুল আলি বলেন, “২০০২ সালের ভোটার লিস্টে এপিক নম্বর না থাকায় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে বারবার আমাকে বলত, তাহলে কি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। এই বয়সে কোথায় যাব। সেই আতঙ্কে হার্ট অ্যাটাক হয় বাবার মৃত্যু হয়েছে।”
পশ্চিম খিলকাপুর পঞ্চায়েতটি মধ্যমগ্রাম বিধানসভার অন্তর্গত। নিজের বিধানসভার প্রবীণ নাগরিকের মৃত্যুর খবর পেয়ে এদিন দুপুরে মৃতের বাড়িতে আসেন স্থানীয় বিধায়ক তথা খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। ছিলেন বারাসত ১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হালিমা বিবি, মধ্যমগ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান নিমাই ঘোষ সহ অন্যান্যরা। মন্ত্রীর সামনেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মৃতের পরিবার তাদের সমবেদনা জানিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিয়ে রথীন ঘোষ বলেন, “বিজেপি নেতাদের মুখে ‘ঘুষপেটিয়া’ কথাটি বারবার শুনে মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। জিয়ার আলির নাম ভোটার লিস্টে থাকলেও এপিক নম্বর না থাকা কমিশনের ভুল। এর মাশুল দিতে হল জিয়ার আলিকে। খুবই দুঃখজনক ঘটনা।”