সুমন করাতি, হুগলি: নির্বাচনী বৈতরণী পেরতে কত কী-ই না করতে হয় রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রীদের। প্রতিবছর ভোটের আগে তাঁদের নানা কার্যকলাপের দৃশ্য ধরা পড়ে সংবাদমাধ্যমে। কেউ মাঠে নেমে কৃষকদের সঙ্গে চাষের কাজে হাত লাগান, তো কাউকে দেখা যায় গ্রামাঞ্চলে জনসংযোগের জন্য আমজনতার সঙ্গে খাটিয়ায় বসে গল্প করতে, খাবার খেতে। এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতারও তেমনই এক ছবি এবার প্রকাশ্যে এল। বীরসা-মুন্ডার জন্ম সার্ধ্বশতবর্ষে আদিবাসী আবেগ উসকে বৃদ্ধদের পা ধুইয়ে, গামছা দিয়ে মুছে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী! হুগলির সপ্তগ্রামের এক অনুষ্ঠানে তাঁর এই কীর্তি প্রকাশ্যে আসার পর যথারীতি কটাক্ষ করেছে ঘাসফুল শিবির।
শনিবার, বীরসা-মুন্ডার জন্মজয়ন্তীতে দিনভর হুগলির নানা জায়গায় একাধিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বারাকপুরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। বিকেলের দিকে তিনি গিয়েছিলেন সপ্তগ্রাম এলাকায়। সেখানে বীরসা-মুণ্ডার মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান। এরপরই দেখা যায়, সেখানে উপস্থিত একদল আদিবাসী বৃদ্ধকে চেয়ারে বসিয়ে তাঁদের পা ধুইয়ে দিচ্ছেন শুভেন্দু। শুধু তাই নয়, আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী ডুরে গামছা দিয়ে পা মুছিয়েও দিলেন।
আদিবাসী উন্নয়ন নিয়ে শুভেন্দুর বক্তব্য, ”যারা তফসিলি জাতিভুক্ত নয়, তাদের সার্টিফিকেট দিয়ে যারা প্রকৃত এসটি, তাদের অধিকার কাড়া হচ্ছে। জনগোষ্ঠী গ্রামকে মডেল গ্রাম করতে চায় ভরত সরকার। যেখানে সৌর আলো থাকবে, পাকা বাড়ি, শৌচালয় থাকবে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকবে। সাঁওতালি ভাষায় পড়াশোনার জন্য শিক্ষাকেন্দ্র থাকবে, নলকূপ থাকবে। সেখানে করতে দেননি কেন? পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার কথা বলব। দ্রৌপদী মূর্মুকে রাষ্ট্রপতি করার মধ্যে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন আদিবাসীদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে চান।”
শুভেন্দুর এই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই তৃণমূল শিবিরে যথারীতি কটাক্ষের বন্যা। আসলে এই বিরোধী দলনেতাই রাজ্যের মন্ত্রী তথা আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে উঠে আসা জনপ্রতিনিধি বীরবাহা হাঁসদাকে জাত নিয়ে অপমান করেছিলেন। সেই জল গড়িয়েছিল আদালতের দোরগোড়া পর্যন্ত। এবার বীরসা-মুন্ডার জন্মদিবসকে সামনে রেখে শুভেন্দুর পা ধোয়ানো যে স্রেফ লোকদেখানো, তেমনই মত শাসকশিবিরের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতার খোঁচা, সামনে ভোট, তাই আদিবাসীদের কথা মনে পড়েছে শুভেন্দু অধিকারীর। অন্য সময় পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের কথা তাঁরা ভুলে থাকেন। অথচ সারাবছর ধরে আদিবাসীদের পাশে থেকে তাদের উন্নয়নের জন্য একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার কাজ করে বলেই দাবি তাঁর।
বিহার নির্বাচনে এসআইআরের প্রভাব, বঙ্গে এসআইআরের কাজে বিএলও-দের চাপ, ভোটার তালিকা সংশোধন, রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি-সহ একাধিক ইস্যুতে বক্তব্য রেখেছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর মন্তব্য, ”৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা না বেরলে ভোট হবে না। আর ভোট না হলে ৫ মে রাষ্ট্রপতি শাসন কাউকে চাইতে হবে, তা সংবিধান অনুযায়ী হয়ে যাবে।” অর্থাৎ ফের তিনি প্রমাণ করলেন যে বিজেপি বারবার রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি করে বাংলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকেই কাঠগড়ায় তুলতে চাইছে।