নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: লালুপ্রসাদ যাদবের তৈরি করা দল আরজেডির প্রতীক লণ্ঠন আজও রয়ে গিয়েছে। কিন্তু সময় পালটে গিয়েছে। যে প্রজন্ম এই জিনিসকে আলোর প্রতীক ভেবেছে, তাদের সন্তানসন্ততিরা এখন লণ্ঠনকে হয়ত গরিবি ভাবে! তেজস্বী যাদব আধুনিক যুবক হয়েও লণ্ঠনকেই প্রতীক রেখে দিয়েছেন দলের আইকনিক পরিচয় হিসেবে। কিন্তু রামবিলাস পাসোয়ানের দল পারিবারিক বিবাদে দু ভাগ হয়ে যাওয়ায় যেন শাপে বর হয়েছে তাঁর পুত্রের। নতুন প্রজন্মকে নতুন স্বপ্ন দেখাতে আর ঘর নয়, তিনি হেলিকপ্টারকে প্রতীক বেছে নিয়েছেন। আর এবার বিহারের ভোটে লণ্ঠন অনেকটাই স্তিমিত। তার ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলছে হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টারের ঘূর্ণায়মান রোটরের তীব্র বাতাসে কি আগামী দিনে লণ্ঠনের আলো আরও ম্লান হবে? বিহার নির্বাচনে ১৪৩ আসনে লড়াই করে তেজস্বী যাদব পেয়েছেন মাত্র ২৫টি আসন। ২৮টি আসনে লড়াই করে চিরাগ পাসোয়ান পেয়েছেন ১৯। এনডিএ জোট ২০২০ সালে ছিল ৩৭ শতাংশ। এবার ৪৬.৭ শতাংশ। যার মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে চিরাগ পাসোয়ানের সাড়ে ৫ শতাংশ। যা ২০২০ সালে ছিল না। তাই এই বিপুল জয়ে একটি বিরাট অবদান চিরাগের। স্বাভাবিকভাবেই চিরাগ পাসোয়ান ক্ষমতার ভাগ চাইবেন সেটা প্রত্যাশিত। প্রকাশ্যে না হলেও চিরাগ পাসোয়ান চাইছেন একটি উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ। তিনি নিজে? নাকি অন্য কেউ? সেটা এখনও জানা যাচ্ছে না। কারণ, এখনও তিনি এমপি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। শনিবার চিরাগ সব দূরত্ব ভুলে নীতীশ কুমারের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী’ নীতীশ কুমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। সুতরাং নীতীশের দশম বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নিশ্চিত। চিরাগ পাসোয়ানের সঙ্গে রয়েছে নরেন্দ্র মোদির আশীর্বাদ। কারণ, তিনিই বিজেপির কাছে আগামী নীতীশ! এখন দেখার চিরাগের দলকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদ দেওয়া হয় কিনা। নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি ও চিরাগের দলের একজন করে উপমুখ্যমন্ত্রী। এই কি ফর্মুলা হতে চলেছে?
লালুপ্রসাদ যাদবের পরিচয় ছিল গরিবো কি মসিহাঁ। প্রথমে জরুরি অবস্থা বিরোধী আন্দোলন এবং পরে মণ্ডল রাজনীতির মাধ্যমে বিহারে যে তিনজন নেতার উদ্ভব হয়েছিল, সেই লালুপ্রসাদ যাদব, নীতীশ কুমার এবং রামবিলাস পাসোয়ানের মধ্যে সবথেকে ক্ষুদ্র ভোটব্যাংক এবং কম প্রভাব নিয়ে বাকি দু’জনের পিছনেই পড়ে গিয়েছিলেন রামবিলাস পাসোয়ান। তিনি যদি অনগ্রসর রাজনীতির দৌড়ে থার্ড বয় হন, তাহলে ফার্স্ট বয় হিসেবে নয়ের দশকে চ্যাম্পিয়ন অবশ্যই লালুপ্রসাদ যাদব। রামবিলাস পাসোয়ান কখনও লক্ষ্যচ্যুত হননি। তিনি অনগ্রসরদের
একাংশকে নিজের ভোটব্যাংকে পরিণত করেছিলেন। তাই ভি পি সিং থেকে নরেন্দ্র মোদি—রামবিলাস পাসোয়ান সব কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন। বিহারে নীতীশ-লালুর মধ্যে যখন ফার্স্ট-সেকেন্ড হওয়া নিয়ে প্রবল প্রতিযোগিতা, তখনও রামবিলাস নিজের ক্ষুদ্র ভোটব্যাংক নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন। তিনি কখনও কিং মেকার হতে পারেননি! রামবিলাস পাসোয়ানের দলের প্রতীক ছিল ঘর। বিহারের দলিত মানুষের কাছে নিজের ঘর হওয়া ছিল স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে উস্কে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর পুত্র চিরাগ পাসোয়ান হেলিকপ্টারে ওঠার স্বগ্ন দেখালেন ভোটব্যাংককে। ছবি: পিটিআই