নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ফরেনসিক টিম নমুনা নিয়েছিল। রাসায়নিক, রি’এজেন্ট এবং বিস্ফোরক উপকরণকে পৃথক করে রাখার কাজও শেষ। সেই প্রক্রিয়া চলাকালীন কিছু হল না। অথচ সেই পর্ব সমাপ্ত হওয়ার পর যখন সর্বোত্তম সতর্কতায় ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিভ প্রসিডিওর’ অনুসরণ করে প্রতিটি উপকরণের উপযুক্ত সংরক্ষণ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে, ঠিক তখনই কাশ্মীরের নওগাঁও থানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ! এটা কীভাবে সম্ভব? ফরিদাবাদ থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া বিস্ফোরক জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ রেখেছিল এই থানার স্টোররুমেই। শুক্রবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে আচমকাই সেই বিস্ফোরক ফেটে গেল। থানার একাংশ ভস্মীভূত। উড়ে গিয়েছে ছাদ। গোটা থানা এখন কার্যত ধ্বংসস্তূপ। এই বিস্ফোরকই লালকেল্লার রাস্তাতেও বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। এবং তার প্রভাব উভয়ক্ষেত্রেই প্রায় সমান। দিল্লিতে মৃত্যুর সংখ্যা ১৩, নওগাঁওয়ে শনিবার পর্যন্ত মৃত ৯ জন।
এই বিস্ফোরণের সঙ্গে কি কুখ্যাত পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী জয়েশ-ই-মহম্মদের শাখা সংগঠন ‘পিএএফএফ’ জড়িত? এদিন জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ যদিও জানিয়েছে, সেরকম কোনও সূত্র পাওয়া যায়নি। এই বিস্ফোরণ আপনা থেকেই হঠাৎ ঘটেছে। জমে থাকা বিস্ফোরক পদার্থ বিস্ফোরণের অতীত ইতিহাস আছে। কিন্তু রহস্য হল, মেডিকেল মডিউল যে বিস্ফোরণ ব্যবহার করছে, তার চরিত্রটা ঠিক কী? নিছক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট? টাইমার, ডিটোনেটর, রি’এজেন্ট ইত্যাদির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির একটি সূত্র বলছে, এটি একটি নতুন ধরনের শক্তিশালী বিস্ফোরক। নাম—ট্রাইঅ্যাসিটোন ট্রাইপারওক্সাইড বা টিএটিপি! অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো রাসায়নিকের সঙ্গে তা মিশিয়ে তৈরি হয় ‘আইইডি’। লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণে ব্যবহৃত আই-২০ গাড়িতে টিএটিপির অস্তিত্ব পেয়েছে ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি।
যদিও বিষয়টি নিয়ে তদন্তকারীরা সংশয়ে রয়েছেন। কারণ, বিশেষ বিস্ফোরকটি গাড়িতে মজুত করে, আল ফালাহ থেকে সরিয়ে অন্যত্র রাখার পরিকল্পনায় ডাঃ উমর উন নবি দিনভর দিল্লিতে ঘুরেছে। বিকেলে লালকেল্লার সামনের পার্কিং লটে গাড়ি রেখেছে। ততক্ষণ কোনও বিস্ফোরণ হয়নি। গাড়ি পার্কিং থেকে বের করে সে যখন রাস্তায় চালাচ্ছে, ঠিক তখনই আপনাআপনি হঠাৎ বিস্ফোরণ! নওগাঁও থানাতেও তার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এই সাদৃশ্যের কারণ কী? বিস্ফোরক যে ঠিক কী রকমের ছিল, সেটা চারদিন কেটে গেলেও স্পষ্ট হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব (কাশ্মীর) প্রশান্ত লোখান্ডে বলেছেন, ‘কাশ্মীরের থানায় বিস্ফোরণ কীভাবে ঘটল, সেটা এখনও স্পষ্ট হয়নি। দু’দিন ধরে এই বিস্ফোরক থানায় রাখা। ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তার আগে হরিয়ানা থেকে কাশ্মীরে আনা হয়েছে। তখন কিছুই ঘটল না। সুতরাং আরও গভীর তদন্ত করা দরকার যে, কেন এই বিস্ফোরণ?’
বস্তুত রিমোট কন্ট্রোল কিংবা টাইমার চালিত বিস্ফোরক হলে, সেটার জন্য প্রয়োজনীয় অন্য উপকরণও পাওয়া যেত। কিন্তু সেই পরীক্ষা পর্ব সমাপ্ত হয়নি। তার মধ্যেই নতুন বিস্ফোরণ। এর ফলে তদন্তের সবথেকে বড় ক্ষতি হল। কারণ, বিস্ফোরকের প্রকৃতি কী ছিল, সেটা পূর্ণাঙ্গভাবে পরীক্ষা করার মতো আর পর্যাপ্ত নমুনা থাকছে না। বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রাপ্ত ‘স্যাম্পেল’ শুধু সংগ্রহ করা হয়েছে। যা আছে, তা আগে থেকেই ফরেনসিক ল্যাবরেটরির কাছে। কিন্তু আবার প্রয়োজন পড়লে, ম্যাচিংয়ের দরকার হলে কিংবা রি’এজেন্ট এবং কেমিক্যালের সংযোগ পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করতে হলে? নমুনা নেই। বিস্ফোরকের প্রকৃতি, চরিত্র যেনতেনপ্রকারেণ ধ্বংস করতে আড়াল থেকে কোনও চক্র এখনও সক্রিয় না তো! সেই কারণে কাশ্মীরের থানার মধ্যে হওয়া বিস্ফোরণের পিছনে এখনও পর্যন্ত কোনও জঙ্গি যোগের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া না গেলেও, লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা বলেছেন, ‘উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হবে। কাশ্মীর পুলিশ, এনআইএ এবং দিল্লি পুলিশ একযোগে কাজ করবে।’ লালকেল্লার বিস্ফোরণ, মেডিকেল টেরর মডিউল, রহস্যজনক বিস্ফোরক এবং বিদেশি সংযোগ! রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে।