• দিল্লি বিস্ফোরণে ‘যোগ’ রাজ্যের ৩ জেলবন্দিরও, প্রেসিডেন্সি, আলিপুর, দমদম জেলে হানা গোয়েন্দাদের
    বর্তমান | ১৬ নভেম্বর ২০২৫
  • দেবাঞ্জন দাস ও শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা: রাজ্যের জেলে বন্দি তিনজনের সঙ্গে ‘যোগ’ মিলল দিল্লি বিস্ফোরণের! প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই দেশবিরোধী চক্রান্ত ও জঙ্গি কাজকর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বিস্ফোরণ পরবর্তী পর্যায়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতবিরোধী প্রচারে লিপ্ত ‘র‌্যাডিকাল গ্রুপ’গুলির উপর নজরদারি চালাতে গিয়ে তিনজনের হদিশ মিলেছে। গোয়েন্দারা জেনেছেন, লালকেল্লার রাস্তায় বিস্ফোরণের অনেক আগে থেকে বিভিন্ন গ্রুপে বড়োসড়ো হাঙ্গামা ও নাশকতা পাকানোর ছক তৈরি হচ্ছিল। তাতে ‘সক্রিয়’ অংশগ্রহণ ছিল ওই তিন বন্দির। গ্রুপগুলিতে বিস্ফোরক ব্যবহার করে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরির পদ্ধতি এবং ফর্মুলা নিয়েও আলোচনা করেছে ভারতবিরোধী শক্তির এই এজেন্টরা। এমনকি বিস্ফোরণের ‘সাফল্য’ও উদযাপন হয়েছে।

    গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তিনজন হল আলিপুর মহিলা কারাগারের বন্দি ‘লস্কর হ্যান্ডলার’ বাদুড়িয়ার তানিয়া পারভিন, দমদম সেন্ট্রাল জেলে ‘লস্কর এজেন্ট’ সৈয়দ এম ইদ্রিশ ওরফে মুন্না এবং প্রেসিডেন্সি জেলে থাকা সাবির আহমেদ। ইদ্রিশ কর্ণাটকের উত্তর কন্নড় জেলার শিরসির বাসিন্দা। নদীয়ার পলাশিপাড়ায় বাড়ি সাবিরের। গোয়েন্দারা বলছেন, এখন আর আলাদা করে জয়েশ-ই-মহম্মদ বা লস্কর-ই-তোইবার মতাদর্শ প্রচার চলছে না সমাজমাধ্যমে। পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলির ‘মাদার অর্গানাইজেশন’ ইউনাইটেড জেহাদ কাউন্সিলই এখন সেই দায়িত্বে। শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত তিন বন্দিকে সংশোধনাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন রাজ্য ও কেন্দ্রের গোয়েন্দারা। সেল থেকে উদ্ধার হয়েছে মোবাইল সহ নানা সরঞ্জাম। এই মোবাইলগুলির মাধ্যমেই পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, তুরস্ক, ইরাক ও ইরান থেকে নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন র‌্যাডিকাল গ্রুপে সতীর্থ জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল তানিয়ারা। তদন্ত পর্বে এও জানা গিয়েছে, মাসুদ আজহারের বোন তথা জয়েশের মহিলা শাখার প্রধান সাইদা আজহারের নির্দেশে গ্রুপগুলিকে সক্রিয় করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি গ্রুপেই ‘মেন্টর’ হিসেবে হাজির ছিল দিল্লি বিস্ফোরণ কাণ্ডে ধৃত ডাঃ শাহিন শাহিদ। আর কারা কারা গ্রুপগুলিতে অংশ নিয়েছিল, সে সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর চলছে। 

    গোয়েন্দারা বলছেন, তানিয়া, ইদ্রিশ এবং সাবির বিভিন্ন গ্রুপে লাগাতার ভারতবিরোধী ও জঙ্গি মতাদর্শ প্রচার করত। সমমনোভাবাপন্ন যুবক-যুবতীদের আকৃষ্ট করার কাজও শুরু করেছিল তারা। দিল্লিতে যে বড়োসড়ো কিছু হতে চলেছে এবং তার খবর যে জেলবন্দিদের কাছে ছিল, তা গ্রুপের আলাপচারিতা দেখে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে যুক্ত তিন কুখ্যাত জেলবন্দির কাছে মোবাইল ফোন পৌঁছল কীভাবে? সংশ্লিষ্ট তিন সংশোধনাগারের কয়েকজন আধিকারিক তাই এখন গোয়েন্দাদের ‘স্ক্যানারে’। 

    জানা গিয়েছে, দমদম জেলে বন্দি কর্ণাটকের ইদ্রিশ এখন জেহাদিদের জন্য অর্থ সংগ্রহের দায়িত্বে। এই পর্বেই খোঁজ মিলেছে নদীয়ার পলাশিপাড়ার বড় নলডহের সাবিরের। তার কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছে ইদ্রিশ। গোয়েন্দারা হানা দিয়েছেন পলাশিপাড়াতেও। ইদ্রিশের মোবাইলে খোঁজ মিলেছে আয়েশা নামে এক বাংলাদেশি মহিলার। গোয়েন্দারা বলছেন, তানিয়া জেলে থাকায় এখন অনলাইনে জঙ্গি রিক্রুটের কাজ করছে এই মহিলাই।
  • Link to this news (বর্তমান)