• খনি সম্প্রসারণ করতেই রানিগঞ্জে নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা কেন্দ্রীয় সংস্থার!, ক্ষুব্ধ শহরবাসী, অবৈধ নির্মাণে কাটমানির খেলা
    বর্তমান | ১৬ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানিগঞ্জ: ছ’মাসের বেশি হয়ে গেল রানিগঞ্জ শহরের বেশিরভাগ জায়গায় বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন সম্পূর্ণ বন্ধ। নতুন বাড়ি বানাতে গিয়ে নাজেহাল মানুষ। বাধ্য হয়েই অনেকে প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়ি সম্প্রসারণ করছেন। তবে তা করতে গিয়ে প্রভাবশালীদের কাটমানি দিতে হচ্ছে। এই সমস্যার মূলে কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘ডিরেক্টর অব মাইন সেফটি’-র একটি ফতোয়া। তাতে ধস প্রবণ এলাকা থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় বিল্ডিং প্ল্যান পাশ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছেপুরসভাকে। কিন্তু কেন এই ফতোয়া?

    দুর্ঘটনাকে কারণ হিসেবে দেখালেও ইসিএল সূত্রে খবর, মহাবীর কোলিয়ারিরবড়সড় সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে ইসিএল। ‌ই঩তিমধ্যেই দু‌঩’টি বেসরকারি সংস্থাকে কয়লা উত্তোলনের বরাতও দেওয়া হয়ে গিয়েছে। ‘রানিগঞ্জ বাঁচাও কমিটি’ গড়ে বাসিন্দারাআন্দোলনেও নেমেছেন। বিষয়টি নিয়ে ইসিএল কোনও প্রতিক্রিয়া না দেওয়ায় জল্পনা আরও বাড়ছে। ইসিএলের ডিরেক্টর নীলাদ্রি রায়কে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটাসঅ্যাপ মেসেজরওজবাব দেননি। 

    মহাবীর কোলিয়ারির নাম রানিগঞ্জের সঙ্গে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে। ১৯৮৯ সালে সেই কোলিয়ারি দুর্ঘটনা দেশের তোলপাড় ফেলেছিল। মহাবীর কোলিয়ারিতে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারের কাহিনিগল্পকথা হয়ে উঠেছে। সেই মহাবীর কোলিয়ারির সম্প্রসারণ ও সেখানে ওসিপি করার জন্যই কি এবার শতাব্দী প্রাচীন শহর রানিগঞ্জের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

    কেন রানিগঞ্জের মানুষের বিল্ডিং প্ল্যান পাশ হচ্ছে না? বরো চেয়ারম্যান মোজ্জামেল শেহজাদা বলেন, ছ’মাস আগে ইসিএলের লোকজন এখানে এসেছিলেন। তাঁরা মৌজা ম্যাপ দিয়ে চিহ্নিত করে বলে গিয়েছেন, ধস প্রবণ এলাকা থেকে ৩০০ মিটারের মধ্যে কোনও বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন করা যাবে না। সেই কারণেই আমরা তা করতে পারছি না। এরজেরেই শহরজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন প্রয়োজনের মানুষকে পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি করতে হয়। অনেক সময়ে পরিবার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির সম্প্রসারণ প্রয়োজন হয়। শহরের বাসিন্দা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বহুতল নির্মাণ হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু কোনও প্ল্যান অনুমোদন না হওয়ায় সেই কাজ বৈধ ভাবে করা যাচ্ছে না। অনেকেই অবৈধ ভাবে নির্মাণ করতে গিয়ে কাটমানির খপ্পরে পড়ছেন। তবে কাটমানি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেননি কেউ। 

    কেন ইসিএলের এই ফরমান? রানিগঞ্জ বাঁচাও কমিটির আহ্বায়ক গৌতম ঘটক বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার বহু দিন ধরেই চায় রানিগঞ্জ শহরকে তুলে দিয়ে সেখান মাটির নীচে মজুত কয়লা তুলতে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতেই বিল্ডিং প্ল্যান পাশ না করার নির্দেশ। আমরা চাই পুরসভা থেকে রাজ্য সরকার এর প্রতিবাদ করুক। একটা শহরে কোনও নির্মাণ হবে না? এটা সম্ভব! রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমার ধারণা খনি সম্প্রসারণ করার জন্য বিল্ডিং প্ল্যান পাশে আপত্তি জানানো হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা কয়লা তুলে বিপুল লাভ করবে আর আমাদের বদনাম হবে। রানিগঞ্জের আইসি বিকাশ দত্ত বলেন, দু’টি বেসরকারি সংস্থা কয়লা উত্তোলন করবে বলে জানিয়ে গিয়েছে। সিপিএম এরিয়া সম্পাদক সুপ্রিয় রায় বলেন, আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। রানিগঞ্জকে ধ্বংস করতে দেব না। বিজেপি নেতা শমসের সিং বলেন, বিল্ডিং প্ল্যানের অনুমোদন তো রাজ্য সরকারের সংস্থা করে। তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক।
  • Link to this news (বর্তমান)