• ট্রলি ব্যাগের চেন না কেটেই রেলযাত্রীদের সামগ্রী চুরি, ধৃত তিন
    আনন্দবাজার | ১৬ নভেম্বর ২০২৫
  • দূরপাল্লার ট্রেন থেকে নামার সময়ে অভিনব কায়দায় যাত্রীদের ট্রলি ব্যাগের চেন না কেটে সোনার গয়না-সহ নগদ টাকা এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী গায়েব করে দিচ্ছিল একটি চক্র। অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে দূরপাল্লার ট্রেনে চুরির ঘটনায় সিদ্ধহস্ত, দিল্লির কুখ্যাত ‘শান সি সুলতানপুরী’ দলের মূল মাথা-সহ তিন দুষ্কৃতীকে অবশেষে গ্রেফতার করল শালিমার রেল পুলিশ। রেল পুলিশ জানিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে খোঁজ চলছিল এই দলটির। শেষমেশ দলের এক সদস্যের মোবাইল ফোনের অবস্থানের সূত্রে তিন অভিযুক্তকে সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে ধরা হয়। ধৃতদের নাম রণবীর সিংহ, অজমের সিংহ ও মুকেশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৩০ গ্রাম সোনার গয়না, জাল আধার, ভোটার ও প্যান কার্ড।

    খড়্গপুর রেল পুলিশের সুপার দেবশ্রী সান্যাল বলেন, ‘‘কোনও রাজ্যে বড় উৎসব বা পার্বণের সময়ে এই কুখ্যাত দলটি বিমানে করে সেখানে আসত। কাজ হাসিল করে ট্রেনে দিল্লি ফিরে যেত। দলের মূল মাথা রণবীর। সে-সহ তিন জন ধরা পড়ায় রেলপথে হওয়া অপরাধ অনেকটাই কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।’’

    কী ভাবে ‘অপারেশন’ চালাত দলটি? রেল পুলিশের তদন্তকারীরা জানান, অভিযুক্তেরা মূলত বিভিন্ন রাজ্যের বড় ধর্মীয় উৎসবগুলি নিশানা করত। উৎসবের সময়ে দিল্লি থেকে বিমানে তারা যেত সংশ্লিষ্ট রাজ্যে। এর পরে সেখানকার দূরপাল্লার ট্রেনে উঠত ‘শিকার’ ধরতে। দলে থাকত চার-পাঁচ জন। স্টেশনে ট্রেন থামার পরে যাত্রীরা মালপত্র নিয়ে গেটের সামনে আসতেই তাঁদের কাউকে লক্ষ্য করে গেট আগলে দাঁড়িয়ে পড়ত মোটা চেহারার এক ব্যক্তি। যাকে বলা হত ‘ওয়াল’। তার পিছনে থাকত দলের আর এক সদস্য, যাকে বলা হত ‘মাস্টার’। তার কাজ ছিল লোহার শিক জাতীয় কিছু দিয়ে নিঃশব্দে ট্রলি ব্যাগের লক না খুলেই জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়া। তদন্তকারীরা জানান, পুরো কাজ শেষ করতে দুষ্কৃতীরা সময় নিত মেরেকেটে দু’মিনিট। যার জন্য তারা কোনও দিন গোলমালে জড়ায়নি। বরং, যাত্রীদের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার করে নিজেদের কাজ হাসিল করেছে।

    রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিম দিল্লির সুলতানপুরীর বাসিন্দা এই গোষ্ঠীর সদস্যেরা দেশ জুড়ে অপরাধ করা সত্ত্বেও তাদের নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না। খড়্গপুর রেল পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা নিজেদের মধ্যে কথা বলত সমাজমাধ্যমে। যে কারণে প্রাথমিক ভাবে এদের ধরতে বেগ পেতে হয়। শেষ পর্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে দুষ্কৃতীদের গতিবিধি অনুসরণ করে বুধবার সেকেন্দ্রাবাদ এক্সপ্রেস থেকে নামার পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়।’’

    তদন্তকারীরা জানান, ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া পরিচয়পত্রগুলির কোনওটিই আসল নয়। ওই আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড হরিয়ানার সঞ্জয় গান্ধী ট্রান্সপোর্ট নগরের একটি দোকান থেকে তৈরি। ধৃতদের ১১ দিনের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে দলের বাকিদের খোঁজ চলছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)