• চিতাবাঘ, স্লথ ভালুকের বাস, সংরক্ষণ পাবে কি পুরুলিয়া
    আনন্দবাজার | ১৬ নভেম্বর ২০২৫
  • একটি-দু’টি নয়, পুরুলিয়ার জঙ্গলে অন্তত চারটি স্লথ ভালুকের খোঁজ মিলেছে। জঙ্গলে পাতা ক্যামেরার ফাঁদে ধরা পড়েছে চিতাবাঘের অস্তিত্বও। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, পুরুলিয়ায় কি তা হলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল বা অভয়ারণ্য তৈরির প্রয়োজন আছে? বন দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, প্রাথমিক ভাবে স্লথ ভালুক সংরক্ষণের ভাবনাচিন্তা চলছে। এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) সন্দীপ সুন্দ্রিয়াল-সহ বন্যপ্রাণ শাখার শীর্ষ কর্তারা শীঘ্রই পুরুলিয়ায় যেতে পারেন। সেখানেই এ ব্যাপারে বিশদে আলোচনা হতে পারে বলেও ওই সূত্রের দাবি।

    বন দফতরের খবর, গত কয়েক বছর ধরেই ঝালদা-কোটশিলার জঙ্গলে স্লথ ভালুকের অস্তিত্বের কথা জানা গিয়েছিল। তার পরে ওই তল্লাটে বন্যপ্রাণী সমীক্ষা বন দফতরের পাশাপাশি একটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থাও ক্যামেরা-ফাঁদ পেতেছিল। সেই ফাঁদে এর আগেও বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর ছবি পাওয়া গিয়েছিল, যাদের অনেককেই আগে পুরুলিয়ার জঙ্গলে দেখা যায়নি। সেই ফাঁদেই স্লথ ভালুকের ছবি ধরা পড়েছে। প্রসঙ্গত, এই প্রাণী আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজ়ারভেশন অব নেচার’ (আইইউসিএন)-এর ‘বিপন্ন’ (ভালনারেবল) তালিকাভুক্ত।

    পুরুলিয়ার জঙ্গলে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ক্যামেরা ফাঁদে চিতাবাঘের ছবি ধরা পড়েছে। ওই সংস্থার মুখপাত্র শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিতাবাঘের পাশাপাশি হানি ব্যাজার, রাস্টি স্পটেড ক্যাটের অস্তিত্বও প্রমাণিত হয়েছে।’’ শুভ্রজ্যোতিও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এক সময়ে পুরুলিয়ার জঙ্গলে চিতাবাঘ ছিল। কিন্তু বিস্ফোরক দিয়ে পাহাড় ফাটিয়ে বাঁধ তৈরি ও অন্য উন্নয়নমূলক কাজের জন্য চিতাবাঘ কমে গিয়েছিল। কিন্তু অরণ্যের পরিস্থিতি ভাল হওয়ায় ফের চিতাবাঘ ফিরছে।

    সংরক্ষিত বনাঞ্চল তৈরি নিয়ে শুভ্রজ্যোতির বক্তব্য, ‘‘যে কোনও সংরক্ষিত বনাঞ্চল একটি প্রাণীর নামে হয়। যেমন গরুমারা, জলদাপাড়ায় গন্ডার বা সুন্দরবনে বাঘ। কিন্তু বাস্তবে পুরো বনাঞ্চল, এবং বাস্তুতন্ত্রই তাতে লাভবান হয়। তা ছাড়া, পূর্ব ভারতে ভালুকের অভয়ারণ্য নেই। তাই ভালুক সংরক্ষণের কাজ শুরু হলে চিতাবাঘ-সহ সব প্রাণী সংরক্ষিত হবে।’’

    স্লথ ভালুকের উপস্থিতিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ। তাঁর মতে, স্লথ ভালুক খুবই লাজুক প্রাণী। জঙ্গলে উপদ্রব থাকলে তারা থাকে না। তাই স্লথ ভালুকের দেখা মিললে বোঝা যায় যে জঙ্গলে উপদ্রব নেই এবং অরণ্যের অবস্থা ভাল। প্রসঙ্গত, শ্রীলঙ্কাতেও একসময় বিস্তীর্ণ এলাকায় সিংহলি স্লথ ভালুকের বসতি ছিল। কিন্তু অরণ্য এলাকায় চা ও কফি বাগান তৈরি হওয়ায় কয়েকটি এলাকাতেই এখন তাদের দেখা যায়।

    পুরুলিয়ার ডিএফও এ-ও জানান, স্লথ ভালুক সাধারণত ছোট মাপের গুহায় থাকে। তাদের বাসস্থানে প্যাঙ্গোলিন, সজারুর মতো প্রাণীরাও থাকে। তার ফলে স্লথ ভালুকের উপস্থিতি জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্রের পক্ষেও উপযোগী। আপাতত, চারটি পূর্ণবয়স্ক স্লথ ভালুকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলেও পায়ের ছাপ দেখে বন-কর্তাদের অনুমান, আরও কয়েকটি ভালুক ওই তল্লাটে ঘোরাফেরা করে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)