চোরাপথে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের অর্থাৎ চুলের যোগান বাড়ায় এমনিতে পরচুলার বাজার এখন মন্দা। তার উপর আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই কোটি কোটি টাকা ধারে চিনা ব্যবসায়ীদের পরচুলা দেওয়ায় ব্যবসার অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে বলে অভিযোগ। নগদে লেনদেন করা ছোট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চিনা সংস্থাগুলি পরচুলা কিনছে না। ফলে ব্যবসা বন্ধ করে দিতেও বাধ্য হচ্ছেন এনেক ছোট ব্যবসায়ী। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে ঋণের ফাঁসে জড়িয়ে পড়ছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুর ও মুর্শিদাবাদ জেলার পরচুলা ব্যবসায়ীরা।
বছর দশেক আগেও ভগবানপুর ও চণ্ডীপুরের পরচুলা ব্যবসাকে ‘কালো সোনা’ বলা হত লাভের অঙ্কের নিরিখে। স্বল্প পুঁজিতে এখান থেকে লাখ থেকে কোটি টাকার ব্যবসা চলতো আন্তর্জাতিক বাজারগুলিতে। চিনা সংস্থাগুলির এজেন্ট এই এলাকায় এসে ঘরভাড়া করে মাসের পর মাস বসবাস করতেন। তাঁরা এখানকার পরচুলা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নগদে সরাসরি পরচুলা কিনে চিনে রফতানি করতেন। প্রতি সপ্তাহে গড়ে তিরিশ থেকে চল্লিশ টন পরচুলা চিনে রফতানি হতো। কিন্তু করোনার পর থেকে ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে।
কাঁচামাল বাংলাদেশ ও মায়নামার হয়ে চোরাপথে চিনে পাচার হতে থাকে। মায়নামার ও বাংলাদেশে কম পারিশ্রমিকে পরচুলা তৈরি হয়ে চিনে পাচার হওয়ায় রফতানি শুল্ক দিতে হতো না। ফলে পরচুলা আগের থেকে অনেক কম দামে পাওয়া যেত। গত কয়েক বছরে চিন ও মায়নামারের বাজারে ব্যবসা বাড়াতে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী নতুন পদ্ধতি নিয়েছেন। তাঁরা কোটি কোটি টাকা ধারে চিন ও মায়নামারের পরচুলা ব্যবসায়ীদের চুল রফতানি করছেন। ধারে সহজে বিপুল চুল মেলায় নগদে লেনদেন করেন এমন ব্যবসায়ীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চিনের ব্যবসায়ীরা।
এলাকায় ছোট ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে মাল বিক্রি করতে না পেরে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছেন। কারবার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ব্যবসার প্রয়োজনে আগে এলাকার মহাজনের থেকে এঁদের অনেকেই ঋণ নিয়েছিলেন। ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় সময় মতো মহাজনকে সেই টাকা পরিশোধ করতে না পারছেন না। তখন নিজেদের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি বন্ধক রেখে ব্যাঙ্ক ঋণ নিচ্ছেন। সেই ঋণও সময়ে পরিশোধ না করায় ব্যাঙ্ক তাঁদের বাড়ি ও সম্পত্রি বাজেয়াপ্ত করছে।
‘পশ্চিমবঙ্গ হিউম্যান হেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সভাপতি মনোজ সামন্ত বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক বাজারে ধারে কারবার শুরু হওয়ায় জেলার ছোট পরচুলা ব্যবসায়ীরা মার খাচ্ছেন। তাঁদের ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে। ভগবানপুর ও মুর্শিদাবাদে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি। সংগঠনগত ভাবে বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’’