বিহারে এনডিএ-র বিপুল জয়ের প্রেক্ষিতেই পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা ভোটে জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে উচ্ছ্বসিত দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপির তাবড় নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রে খবর, বিহার-উচ্ছ্বাসকে দূরে সরিয়ে রেখে পশ্চিমবঙ্গকেই পাখির চোখ করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কৌশলেই যে ভরসা রাখছে, তা-ও স্পষ্ট বলে মনে করছেন রাজ্য নেতৃত্ব। এই কৌশলের অংশ হিসেবে, দলের অন্দরে শাহ-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দুই নেতা বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবকে পশ্চিমবঙ্গের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আগেই। তাঁদের নির্দেশেই বিহার-জয়ের উচ্ছ্বাসের আবহেই শুক্র ও শনিবার সাংগঠনিক বৈঠকও হয়েছে এই রাজ্যে।
বিজেপি সূত্রের খবর, বছর তিনেক ধরে পশ্চিমবঙ্গে পড়ে থাকা বনসলই এই মুহূর্তে যাবতীয় সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। নির্বাচনী রণকৌশল সাজাচ্ছেন ভূপেন্দ্র। তাঁকে সাহায্য করছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। অতীতে উত্তরপ্রদেশেও একই দায়িত্ব সামলেছেন বনসল। বিহারে সাংগঠনিক ও রণকৌশলের দায়িত্বে ছিলেন যথাক্রমে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিনোদ তাওড়ে এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। এমন গতিপ্রকৃতি দেখে বিজেপির অন্দরে একাংশের মত, মেঘের আড়ালে থেকে শাহের ‘শত্রু-বধের চেনা কৌশল’ পশ্চিমবঙ্গেও অনুসরণ করা হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে খবর, উত্তরপ্রদেশের ছকেই ঘুঁটি সাজাচ্ছেন বনসল। সংগঠন ও পরিষদীয় দলকে আলাদা রাখতে পরিষদীয় রাজনীতির কাউকে দলীয় সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অথবা উল্টোটা চাইছেন না বনসল। তাই সূত্রের দাবি, দলের নতুন রাজ্য কমিটি থেকে অব্যাহতি বা কম গুরুত্বপূর্ণ পদে সরানো হতে পারে প্রথম সারির অনেক নেতাকে। এই প্রেক্ষাপটেই রাজ্য বিজেপিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সাংগঠনিক পদে রদবদলের সম্ভাবনা নিয়েও চর্চা রয়েছে দলে। বর্তমান পদাধিকারীকে সে ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের একটি আসন থেকে আসন্ন ভোটে প্রার্থী করা হতে পারে।
সাংগঠনিক কাঠামোয় বদল এনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সতীশ ধন্ডের সঙ্গে সঙ্ঘ মনোনীত আরও দু’জনকে এনে উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণবঙ্গে দায়িত্ব ভাগ করার সম্ভাবনাও আছে। যদিও বনসলের নীতি প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির একনেতা বলেছেন, “উত্তরপ্রদেশে বিধান পরিষদ ছিল। সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকের বিধায়ক হওয়া হয়নি। কিন্তু তাঁদের বিধান পরিষদে পুনর্বাসন দেওয়ার সুযোগ ছিল। এখানে তা সম্ভব নয়। ফলে, এই নীতি কতটা মসৃণ ভাবে রূপায়িত হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে।”
এই আবহেই বিহারে জয়ের উচ্ছ্বাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সাংগঠনিক তৎপরতায় ‘খামতি’ দেখা যায়নি। বিভাগ (জ়োন) ধরে বৈঠক করছেন নেতারা। সম্প্রতি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বনসল শিলিগুড়ি বিভাগে বৈঠক করেছেন। তার পরে আইসিসিআর-এ শুক্রবার কলকাতা বিভাগের বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন তাঁরা। ভূপেন্দ্র কেন্দ্রীয়প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে শনিবার মালদহ বিভাগের সাংগঠনিক বৈঠক করেছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে পর পর সাংগঠনিক বৈঠক করছেন। এই সূত্রেই দলের এক রাজ্য নেতা বলছেন, “গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে বড্ড বেশি ঢাক পেটানো হয়েছিল। এ বার কাজটা অনেক বেশি হচ্ছে।”