• রাসায়নিক থেকে শ্বেতির প্রবক্তা বঙ্গসন্তানকে আন্তর্জাতিক সম্মান
    এই সময় | ১৬ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: ত্বকের সুপরিচিত রোগ শ্বেতি বা ভিটিলিগো নিয়ে সমাজে ভুল ধারণার অন্ত নেই। এ রোগ যে ছোঁয়াচে নয়, তা নিয়েও রয়েছে সচেতনতার অভাব। বরাবর মনে করা হয়, শ্বেতি আদতে অটো–ইমিউন অসুখ। যেখানে শরীরের নিজস্ব ইমিউনিটি বহিরাগত শত্রুর বদলে শরীরেরই কোষের উপরে হামলা চালায়। অন্য দিকে, কোনও রাসায়নিকের সংস্পর্শে ত্বক সাদা হয়ে গেলে তাকে বলা হয় কেমিক্যাল লিউকোডার্মা। সেটিও যে আদতে শ্বেতিই এবং শ্বেতি যে শুধুমাত্র অটো-ইমিউন ডিজি়জে়র কারণে হয় না, হয় নানা রাসায়নিকের প্রভাবেও—সে কথা বেশ কয়েক বছর আগে দুনিয়াকে জানিয়েছিলেন এক বঙ্গসন্তান। ত্বকরোগের সেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সঞ্জয় ঘোষ সম্প্রতি সারা জীবনের কাজের জন্যে সম্মানিত হলেন চণ্ডীগড়ে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ত্বকরোগ সম্মেলনে।

    কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জিক অ্যান্ড ইমিউনোলজিক স্কিন ডিজ়িজ়েসের প্রাক্তন মেডিক্যাল ডিরেক্টর এবং কিষানগঞ্জের এমজিএম মেডিক্যাল কলেজের ত্বকরোগ বিভাগের প্রধান শিক্ষক–চিকিৎসক ছিলেন যখন সঞ্জয়, তখনই তাঁর অধীনে থাকা ছাত্র ও গবেষকদের নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেন শ্বেতি বিষয়ে। ৮৬৪ জন শ্বেতি রোগীকে নিয়ে তাঁর সেই ল্যান্ডমার্ক গবেষণাপত্রটি ‘ব্রিটিশ জার্নাল অফ ডার্মাটোলজি’ নামের বন্দিত বিজ্ঞানপত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই ত্বকরোগের দুনিয়ায় নতুন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয় শ্বেতি ও কেমিক্যাল ভিটিলিগো নিয়ে। গবেষকরা দেখান, কী ভাবে পশ্চিমের দুনিয়ার দেশগুলির চেয়ে ভারতে ঘরে ব্যবহৃত নানা রাসায়নিক ও প্রসাধনী (কলপ, লিপস্টিক, সুগন্ধী, ডিটারজেন্ট, মাজন ইত্যাদি) থেকে অনেক বেশি কেমিক্যাল লিউকোডার্মা হচ্ছে লোকজনের।

    পরে সঞ্জয়ের গবেষণাপত্রকে উদ্ধৃত ও রেফার করে অসংখ্য গবেষণাপত্র লেখা হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন সমাদৃত জার্নালে। তাঁর থিয়োরি ‘কেমিক্যাল লিউকোডার্মাও আসলে শ্বেতিই’ এখন স্বীকৃত ত্বকরোগের জগতে। চলতি বছরেই ‘অ্যাকাডেমিক মেডিক্যাল জার্নাল’ বিজ্ঞানপত্রিকাও তাঁরই থিয়োরিকে সমর্থন করেছে। এমনই ব্যক্তিত্বকে সম্প্রতি শ্বেতি নিয়ে গবেষণায় সারা জীবনের অবদানের জন্যে সম্মান জানানো হয় এশিয়া–প্যাসিফিক এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড অক্যুপেশনাল ডার্মাটোলজি কনফারেন্সে। সেখানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয় ‘একে বাজাজ মেমোরিয়াল ওরেশন’–এ বিশেষ বক্তৃতার জন্যে। সঞ্জয় বলেন, ‘শ্বেতি নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আজও রয়েছে সর্বত্র। এর অবসানে জনসচেতনতা জরুরি।’

  • Link to this news (এই সময়)