• দূষণবিধি, শর্ত মানলে ১৫ বছরের পুরনো গাড়িও চলতে পারে পথে, নির্দেশ আদালতের
    প্রতিদিন | ১৬ নভেম্বর ২০২৫
  • স্টাফ রিপোর্টার: বেসরকারি বাস থেকে বাণিজ্যিক গাড়ি চলাচলের উপর পনেরো বছরের বয়সসীমা আর থাকছে না। নির্দিষ্ট শর্ত মেনে এই ‘বৃদ্ধ’ গাড়িও চলতে পারবে বৃহত্তর কলকাতায়। তবে সেক্ষেত্রে কিছু শর্ত মেনে তা চালাতে হবে। বাসের আয়ু পনেরো বছর পার করলেও বৃহত্তর কলকাতাতে তা চলতে পারবে। বাস মালিকদের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিল কলকাতা হাই কোর্ট।

    নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনও বাণিজ্যিক যান ১৫ বছরের পুরনো হলেও তা রাস্তার উপযোগী কি না, তা যাচাই করতে বছরে দু’বার ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ নিতে হবে। এই পরীক্ষায় পাস করলেই মিলবে রাস্তায় নামার অনুমতি। তাছাড়াও বছরে দু’বার করতে হবে দূষণ পরীক্ষা। বাসমালিকরা বারবারই জানিয়ে আসছিলেন, বাস বাতিলের বিষয়টি বয়স দেখে না করে তার স্বাস্থ‌্য এবং দূষণের মাত্রা দেখে করা হোক। পরিবহণ দপ্তরে এবিষয়ে তাঁরা আবেদনও করেন। তারপর যান আদালতে। তাঁদের আবেদনে সাড়া দিয়ে আদালত তাঁর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

    শহর কলকাতায় দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাণিজি‌্যক গাড়ির বয়স ১৫ বছর হলে তা বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুনাল। তার কোপে পড়ে প্রচুর সংখ‌্যক বাস বসেও যায়। কারণ গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশ মেনে বাস বা ট‌্যাক্সির ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া যাচ্ছিল না। ফলে রাস্তায় বাস কমতে থাকে। মানুষের অসুবিধার কথা উল্লেখ করে বাস মালিকরা কলকাতা হাই কোর্টে একটি আবেদন করেন। তাতে জানানো হয়েছিল, এই নিয়মের বেড়াজাল থেকে যাতে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। বাস মালিকদের এই আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের কাছে তাদের মতামত জানতে চায় আদালত। রাজ‌্যও জানায়, ১৫ বছর হয়ে গেলেই বাসগুলিকে বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়। কারণ, গাড়ির স্বাস্থ্যের উপরেই তার বয়স বা অন্তিম কাল নির্ভর করা উচিত।

    শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতি বছর ২ দুবার করে বাসের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে বাসমালিকদের এবং পাশাপাশি দূষণ পরীক্ষাও দু’বার করতে হবে। সরকারের বক্তব্য, এক ধাক্কায় সমস্ত পুরনো বাস তুলে দিলে শহরের গণপরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। পাশাপাশি, পরিবেশের বিষয়টিও অবহেলা করা যায় না। তাই বিকল্প হিসাবে ১৫ বছর পার করা গাড়িগুলির স্বাস্থ্যপরীক্ষার ভিত্তিতে রাস্তায় চলার অনুমতি পেলে ভালো হয়।

    এরপরেই আদালত বাস মালিকদের আবেদনে সাড়া দেয়। এবং সিদ্ধান্তের কথা জানায়। সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসেসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘গাড়ির আর বয়সসীমা থাকল না। বয়সের ফঁাসে পড়ে যে গাড়ি বসে গিয়েছিল, সেগুলো ফিরে আসবে। দূষণ এবং স্বাস্থ‌্যবিধি মেনে রাস্তায় গাড়ি চলতে পারবে।’’ সারা বাংলা বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ‌্যায় বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম, বয়সের বদলে স্বাস্থ‌্যপরীক্ষাকে ইসু‌্য করা হোক। পরিবহণ দপ্তর উদে‌্যাগী হয়েছে। আদালতের নির্দেশকে স্বাগত।’’ জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দে‌্যাপাধ‌্যায়ের কথায়, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই জানিয়ে আসছি, কোভিডের সময় প্রায় দু’বছরের বেশি সময় বাস বসে ছিল। ফলে বাস বাতিলের আগে সেই দু’বছরের মেয়াদ বাড়ানো হোক। অবশেষে এই বাসের বয়সসীমা তুলে দেওয়া হল। এতে আমরা খুশি।’’
  • Link to this news (প্রতিদিন)