• এই পিচই চেয়েছিলাম, ভাল খেলতে না পারলে হারতে তো হবেই, উইকেটে কোনও জুজু ছিল না, ম‍্যাচ হেরে বললেন গম্ভীর
    আনন্দবাজার | ১৬ নভেম্বর ২০২৫
  • ইডেন টেস্ট হেরে গৌতম গম্ভীর মেনে নিলেন, পিচে কোনও জুজু ছিল না। হারের জন্য নিজেদের ব্যর্থতাকেই দায়ী করলেন ভারতীয় দলের কোচ।

    ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টের প্রথম দিন থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল ইডেন গার্ডেন্সের পিচ। কলকাতায় এসেই গম্ভীর ইডেনের পিচ প্রস্তুতকারক সুজন মুখোপাধ্যায়কে জানিয়ে দিয়েছিলেন কেমন ২২ গজ চান। খেলা শুরুর আগে চার দিন জল না দিয়ে তেমনই পিচ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সুজন। তবু টেম্বা বাভুমাদের কাছে হারতে হল শুভমন গিলদের।

    পিচ নিয়ে তিন দিন ধরে নানা কথা হলেও গম্ভীর ম্যাচ হেরে কোনও অভিযোগ করলেন না। বরং নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিলেন। গম্ভীর মানতে চাননি ইডেনের ২২ গজ স্পিন সহায়ক ছিল। জোরে বোলারদের বেশি উইকেট পাওয়ার তথ্যকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছেন। রবিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে গম্ভীর বলেছেন, ‘‘ইডেনের পিচ বিপজ্জনক ছিল না। খেলার উপযোগী ছিল। টেম্বা বাভুমা তো রান করল। ওয়াশিংটন সুন্দরও ভাল ব্যাট করল। অক্ষর পটেলও তো খেলল। খেলা যাবে না, এমন উইকেট তো ছিল না। জানি না কেন বার বার স্পিন সহায়ক পিচ বলা হচ্ছে! জোরে বোলারেরাই বেশি উইকেট পেয়েছে এই টেস্টে। ব্যাটারদের টেকনিক, মানসিক শক্তি এবং ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয় এ রকম পিচে। আমরা পারিনি। এমন পিচে রক্ষণ ভাল হওয়া দরকার।’’ পিচ নিয়ে বিতর্ক উড়িয়ে গম্ভীর আরও বলেছেন, ‘‘আমরা যেমন পিচ চেয়েছিলাম, ঠিক তেমনই পেয়েছি। কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় অত্যন্ত সাহায্য করেছেন। ভাল খেলতে না পারলে তো এমনই হবে। ১২৪ রান তাড়া করতে না পারার কোনও কারণ ছিল না।’’

    গম্ভীর জানিয়েছেন, তিনি এমন পিচ চান যাতে টস গুরুত্বপূর্ণ না হয়। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা চাই প্রথম দিন থেকেই পিচ স্পিনারদের সাহায্য করুক। যাতে টস গুরুত্বপূর্ণ না হয়। আমরা জিতলে পিচ নিয়ে হয়তো এত আলোচনা হত না। তবে একটা কথা বলা দরকার। আমাদের ক্রিকেটারেরা যে কোনও পরিস্থিতিতে ভাল করতে পারে।’’ গম্ভীর বার বার বুঝিয়ে দিয়েছেন, হারের জন্য পিচের অজুহাত দিতে চান না। তাঁর দলের ক্রিকেটারেরা খেলতে পারেননি বলেই, এ ভাবে হারতে হয়েছে।

    সিএবি সভাপতি আগেই বলেছিলেন, ভারতীয় দল যে পিচ চেয়েছে, সেটাই দেওয়া হয়েছিল। চার দিন আগে থেকে পিচে জল দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। সৌরভ আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, তিন দিনে শেষ হয়ে যেতে পারে খেলা। ভারতীয় দলকে পছন্দ মতো ২২ গজ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন আয়োজক হিসাবে। সেই পছন্দের ২২ গজেই দাঁড়াতে পারেননি ভারতের ব্যাটারেরা। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনারদেরও সামলাতে পারলেন না ঋষভ পন্থ, যশস্বী জয়সওয়ালেরা। ভারতীয়েরা স্পিন বল খেলায় দক্ষ, ক্রিকেট বিশ্ব এমনই জেনে এসেছে এত দিন ধরে। সেই ধারনাও এ বার ভাঙতে বসেছে। এ নিয়ে গম্ভীরের বক্তব্য, ‘‘দুই জমানার তুলনা করা ঠিক নয়। আমাদের দলে কত জন তরুণ ক্রিকেটার রয়েছে দেখুন। ওদের অভিজ্ঞতা কম।’’

    গম্ভীর মেনে নিয়েছেন, তাঁর দল খেলতে পারেনি। কেন? তার উত্তর দেননি। বিশ্লেষণ করবেন বলে জানিয়েছেন। গত বছর নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধেও স্পিন সহায়ক পিচ তৈরি করিয়ে সাফল্য পাননি কোচ গম্ভীর। দেশের মাটিতে ০-৩ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ় হেরেছিল ভারত। তবু জেদ বজায় রেখেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেও ইডেনে ব্যাটারদের পরীক্ষার মুখে ফেললেন। ফল একই। শোচনীয় হার। ফলাফল বদলাতে পারলেন কোথায়? দলের পারফরম্যান্সের উন্নতিও হয়নি। নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে হারের পর নিশ্চই বিশ্লেষণ করেছিলেন। তা হলে ভারতীয় দলের কোচ হিসাবে তাঁর ভূমিকা কী?

    গম্ভীর কি দলের ব্যাটিং শক্তি বিবেচনা করেননি? ইডেনে ব্যাটিং অর্ডারের গুরুত্বপূর্ণ তিন নম্বর জায়গায় কোনও বিশেষজ্ঞ ব্যাটারকে রাখেননি। খেলিয়েছেন ওয়াশিংটন সুন্দরকে। লাল বলের ক্রিকেটেও প্রাধান্য দিচ্ছেন অলরাউন্ডারদের। ব্যাটারদের দক্ষতা বিবেচনা করছেন না। অথচ দলের ব্যর্থতার জন্য দক্ষতার অভাবকে কারণ হিসাবে তুলে ধরছেন! বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মাকে অবসরে পাঠিয়ে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে নিরন্তর পরীক্ষা করছেন। কঠিন পিচে ফেলে দিচ্ছেন অনভিজ্ঞদের। হতে পারে কোচ হিসাবে নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। তা করতে গিয়ে ম্যাচের ফলাফলের কথাও মাথায় রাখছেন না।

    গম্ভীর ইডেনে কি শুধু ভারতকে হারালেন? ক্রিকেটও তো হারল। ছ’বছর পর টেস্ট ক্রিকেট দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীরা। শুক্রবার কাজের দিনও গ্যালারিতে ছিলেন প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ। এখনকার টেস্ট ক্রিকেটে যে দৃশ্য বিরল। সুজন চেয়েছিলেন, পাঁচ দিন খেলা চলার মতো পিচ তৈরি করতে। চেয়েছিলেন, পিচ থেকে যেন ব্যাটার-বোলার সকলে সাহায্য পায়। চেয়েছিলেন, ক্রিকেটপ্রেমীদের উপভোগ্য টেস্ট ম্যাচ উপহার দিতে। সে সবের কিছুই হল না। তিন দিনেরও কম সময়ে হেরে গেল ভারত। ক্রিকেটপ্রেমীরা না দেখতে পেলেন দেশের জয়। না দেখতে পেলেন ব্যাট-বলের ভাল লড়াই।

    এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন না গম্ভীর। পিচ নিয়ে তাঁর জেদ, প্রথম একাদশ নির্বাচনে অবিমিশ‍্যকারিতা ভারতীয় ক্রিকেটকে বার বার লজ্জায় ফেলছে টেস্ট ক্রিকেটে। নিউ জ়িল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হার। বাভুমারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তাঁদের ফাঁদে ফেলতে গিয়ে নিজের দলকেই গাড্ডায় ফেললেন গম্ভীর।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)