সামনেই স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা আর চার শিক্ষকই ব্যস্ত বিএলও-র কাজে, উদ্বেগে অভিভাবকরা
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৭ নভেম্বর ২০২৫
পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের হালাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে মোট পড়ুয়ার সংখ্যা ১১২ জন। সামনেই বার্ষিক পরীক্ষা। স্কুলে মোট শিক্ষক সংখ্যা চার। চার জনই এসআইআর-এর কাজে যুক্ত, বুথ লেভেল অফিসার। এসআইআর-এর কাজের চাপে স্কুলের পঠন-পাঠন কার্যত লাটে উঠেছে। ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা।
প্রথম প্রথম কাজের চাপ কিছুটা হালকা থাকলেও বর্তমানে দম ফেলার সময় নেই বিএলও-দের। ফর্ম বিলি থেকে ফর্ম সংগ্রহ করা সবই তাঁদের করতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে করতে হচ্ছে ডেটা এন্ট্রির কাজ। হাজারও ঝক্কি সামলে আবার স্কুলে শিক্ষকতা করতে হচ্ছে। হালাড়া স্কুলের চার জন শিক্ষকই বিএলও-র কাজ করায় স্কুলের পঠনপাঠনে প্রভাব পড়েছে। সামনেই বার্ষিক পরীক্ষা। অভিভাবকরা চাইছেন নির্বাচন কমিশন বিষয়টা দেখুক।
বিদ্যালয়ের এক পড়ুয়ার মা জানিয়েছেন, ‘ডিসেম্বর মাসে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা। তার আগে স্কুলে শিক্ষকের আকাল। চার জনকেই ভোটার তালিকা তৈরির কাজে যুক্ত করা হয়েছে। অন্য একটি স্কুল থেকে শিক্ষক এনে সামাল দেওয়া হচ্ছে। শতাধিক পড়ুয়ার স্কুল কি একজন শিক্ষক চালাতে পারেন? পরীক্ষার আগে এমন পরিস্থিতিতে আমরাও চিন্তায়।’
হালাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছেন চার শিক্ষক-শিক্ষিকা লক্ষ্মীকান্ত মালিক, সুজিত বাগ, অভিজিৎ মিত্র ও সুজাতা মিশ্র মুখোপাধ্যায়। এই চার জনই এখন দিন-রাত এনুমারেশন ফর্ম নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজিত বাগ জানিয়েছেন, ‘আমাদের স্কুলের চার জনই বিএলও হিসেবে কাজ করছে। আমাদের নিখুঁত ভাবে এসআইআর-এর কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে সবটা সামলাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। গত ৪ নভেম্বর থেকে আমি ও আমার স্কুলের বাকি তিন শিক্ষক-শিক্ষিকার স্কুলে যাওয়া এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে। স্কুলে যাতে তালা না পড়ে, তাই আমরা চার জন পালা করে এক একদিন স্কুলে গিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
ব্লকের স্কুল পরিদর্শক ইটলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহম্মদ আসিফ ফিরদৌসকে হালাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বহাল করা হয়েছে। তিনিই এখন স্কুলটি সামলাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত বাগ।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন যদি রাজ্য সরকার এবং রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিত, তা হলে স্কুলগুলিতে এমন সমস্যা তৈরি হতো না। এসআইআর-এর কাজটাও হতো, স্কুলগুলিও ঠিক মতো চলত।’