• ধৃত ঘাতক গাড়ির মালিক আমির, আত্মঘাতী জঙ্গি উমরের শাগরেদ, কানপুরেই রিক্রুট সেন্টার বানিয়েছিল শাহিন-পারভেজ
    বর্তমান | ১৭ নভেম্বর ২০২৫
  • নয়াদিল্লি: লালকেল্লার সামনে গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় কাশ্মীরের এক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করল এনআইএ। আমির রশিদ আলি নামে ওই বাসিন্দাকে দিল্লি থেকেই পাকড়াও করা হয়। আমিরের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেই চিকিত্সক উমর উন নবি লালকেল্লার সামনে আত্মঘাতী হামলা চালায়। প্রাণ যায় ১৩ জনের। হামলায় যে গাড়িটি ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটিও আমিরের নামে রেজিস্টার্ড ছিল। দিল্লি পুলিশের থেকে তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর থেকেই আমিরের সন্ধানে চিরুনি তল্লাশি শুরু করে এনআইএ। শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে সে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ধৃত ব্যক্তি আদতে জম্মু ও কাশ্মীরের পাম্পোরের সাম্বুরা এলাকার বাসিন্দা। বিস্ফোরণে ব্যবহারের জন্য গাড়ি কেনার তদারকি করতেই সে দিল্লিতে আসে। সম্ভবত জঙ্গিদের মেডিকেল মডিউলের কয়েকজন সদস্য ধরা পড়ার পরই পরিকল্পনায় বদল আনার কথা ভাবে উমর। এরপরই আমিরের সঙ্গে মিলে হামলার ছক কষে সে। আমিরের কাছ থেকে আরও একটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে এনআইএ। ওই গাড়িটিও হামলার জন্য ব্যবহার করা হত কি না, তা জানতে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই মামলায় এখনও পর্যন্ত ৭৩ জন সাক্ষীকে জেরা করা হয়েছে।

    তদন্তে উঠে এসেছে, গত এক বছর ধরে উমরকে আত্মঘাতী জঙ্গি জোগাড় করার কাজে লাগানো হয়েছিল। এর জন্য সে কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় মগজ ধোলাইয়ের কাজ করত। মেডিকেল মডিউলের অন্যতম সদস্য ডাঃ মুজাম্মিল গনি এবং ডাঃ আদিল রাঠেরকে জেরা করে জানা গিয়েছে, উমর নিজে চরমপন্থী ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত ছিল। তাদের ‘অপারেশন’-এর জন্য আত্মঘাতী জঙ্গি প্রয়োজন বলেও বাকিদের বোঝাত সে। দুজনকে জেরা করে দক্ষিণ কাশ্মীরের কাজিগুন্দ থেকে জশির ওরফে দানিশ নামে একজনকে আটক করেছে শ্রীনগর পুলিশ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক জশির গত বছরের অক্টোবরে কুলগাঁওয়ের এক মসজিদে মেডিকেল মডিউলের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে। তাকে হরিয়ানার আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মহম্মদের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করার জন্য তাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর কয়েক মাস ধরে জশিরকে আত্মঘাতী জঙ্গি হওয়ার জন্য ‘মগজধোলাই’ চালায় উমর। যদিও শেষ পর্যন্ত জশির তাতে রাজি হয়নি।

    তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, আইএস এবং জয়েশের মত জঙ্গি সংগঠনগুলি এখন মহিলা শাখা তৈরিতেই বেশি জোর দিচ্ছে। কারণ, মহিলাদের নাশকতামূলক কাজে লাগানো অনেক সহজ। অনেক ক্ষেত্রেই নজরদারিও কম থাকে। সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাইছে জঙ্গি সংগঠনগুলি। এই প্রসঙ্গে উঠে আসছে জয়েশ-ই-মহম্মদের মহিলা শাখা জামাত-উল-মমিনাতের নাম। লালকেল্লা বিস্ফোরণের আগে ধরা পড়েছিল ডাঃ শাহিন শাহিদ আনসারি। পরে আটক করা হয় তার চিকিত্সক ভাই পারভেজকেও। এই ডাক্তার ভাই-বোনকে ঘিরেই এখন আলোচনা লখনউয়ের সর্বত্র। খান্ডারি বাজারের সরু, ঘিঞ্জি গলির ভিতরে দুজনের বাড়ি। তবে দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে শাহিন ও পারভেজ বসবাস করে না। দু’জনের দাদা শোয়েব জানালেন, তাঁদের বাবা শাহিন ও পারভেজকে ডাক্তারি পড়াতে চেয়েছিলেন। দু’জনে এমবিবিএস পাশও করে। কিন্তু ভাই-বোন যে জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়বে, তা ভাবতেই পারিনি। তদন্তে উঠে এসেছে, ভারতে জামাত-উল-মমিনাতের শাখা তৈরির দায়িত্বে ছিল শাহিন। জয়েশ প্রধান মাসুদ আজহারের বোন সাদিয়া মমিনাতের সর্বেসর্বা। আর তার নির্দেশেই ভারতের মাটিতে ধীরে ধীরে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল শাহিন। মমিনাতের রিক্রুট সেন্টার কানপুরের কোনও এলাকা বলেও জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
  • Link to this news (বর্তমান)