• তপশিলি জাতির অবস্থাপন্নদের সংরক্ষণ পাওয়া অনুচিত, মত দেশের প্রধান বিচারপতির
    বর্তমান | ১৭ নভেম্বর ২০২৫
  • অমরাবতী (অন্ধ্রপ্রদেশ): শিক্ষা বা চাকরিতে সংরক্ষণের সুযোগ-সুবিধা ঠিক কাদের পাওয়া উচিত? এই বিতর্ক ফের উসকে উঠল। আর এবার প্রশ্ন তুলে দিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই। ‘তেলা মাথায় তেল দেওয়া’র নীতির বিরোধিতা করে তিনি সাফ জানালেন, তপশিলি জাতির অবস্থাপন্ন অংশকে সংরক্ষণের বাইরে রাখা উচিত।

    সংরক্ষণ ঠিক কাদের পাওয়া উচিত, এ নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। মূল প্রশ্ন একটাই—সংরক্ষণের আওতায় থাকা জনগোষ্ঠীর যারা ‘ক্ষীর খাওয়া’ অংশ কেন এর সুবিধা পাবে? সুবিধাভোগী শ্রেণি এমন সুযোগ বরাবর পেতে থাকলে মার খেতে হয় ওই জনগোষ্ঠীর হতদরিদ্র ও প্রান্তিক অংশকে। কারণ, নিজেদের জনগোষ্ঠীরই অগ্রসর অংশের সঙ্গে পাল্লা দিতে হয় তাদের। এই অসম টক্করে আরও বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়ে তারা। ধাক্কা খায় সংরক্ষণের মূল উদ্দেশ্যই। এই যুক্তিতেই অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) ক্রিমি লেয়ার বা অবস্থাপন্নরা বাদ পড়েছে। তপশিলি জাতি বা উপজাতিদের ক্ষেত্রেও কি তা প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়? এই বিতর্কই ফের উসকে দিয়ে দেশের দ্বিতীয় দলিত প্রধান বিচারপতির যুক্তি, আইএএস অফিসারের সন্তান এবং একজন খেতমজুর বা চাষির ছেলেমেয়েদের সমগোত্রীয় বলে মনে করা যায় না। অর্থাৎ, একজন অবস্থাপন্ন পরিবারের সন্তান পড়াশোনার ক্ষেত্রে যে সুবিধা পায়, তা একজন দরিদ্রের সন্তান পায় না। এই বৈষম্য দূর হওয়া প্রয়োজন। আর তাই তপশিলি জাতির সংরক্ষণে অবস্থাপন্নদের বাদ রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি গাভাই। 

    রবিবার ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য লিভিং কনস্টিটিউশন অ্যাট সেভেন্টি ফাইভ ইয়ার্স’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি ইন্দ্র সাহানি (মণ্ডল কমিশন) মামলার রায়েরও প্রসঙ্গ টেনেছেন তিনি। ওই রায়েই উঠে এসেছিল ক্রিমি লেয়ারকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি। প্রধান বিচারপতি ২০২৪ সালের একটি মামলার রায়ও উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, ওবিসিদের মধ্যে যেমন ক্রিমি লেয়ার চিহ্নিত করা হয়, তেমন ব্যবস্থা তপশিলি জাতিদের ক্ষেত্রেও থাকা উচিত। যদিও ওই মামলায় তাঁর রায় বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি গাভাই। এরপরই একটু হেসে তিনি বলেন, ‘যদিও বিচারপতিদের নিজেদের রায়ের পক্ষে এভাবে সওয়াল করাটা ঠিক নয়। যখন আমার অবসরে এখনও এক সপ্তাহ বাকি।’ 

    ২০২৪ সালের আগস্ট সংরক্ষণ নিয়ে ঐতিহাসিক রায় দেয় সুপ্রিম কোর্টের ৭ বিচারপতির বেঞ্চ। ওই সময়ে দেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। সাতজন বিচারপতির মধ্যে অন্যতম ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই। ওই রায়ে শীর্ষ আদালত জানায়, তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের মধ্যে থেকে অনগ্রসরদের আলাদা করা যাবে। শ্রেণির মধ্যে উপশ্রেণি তৈরি করতে পারবে রাজ্যগুলি। এভাবে সবচেয়ে অনগ্রসর অংশের পৃথক সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যাবে। 

    ওই রায়ে বিচারপতি গাভাই তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, ‘তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের অবস্থাপন্ন অংশকে চিহ্নিত করার জন্য রাজ্যগুলিকে নীতি প্রণয়ন করতে হবে এবং তাদের সংরক্ষণের সুবিধা থেকে বাদ দিতে হবে।’ এদিন আরও একবার একই সুর তাঁর গলায়। অবসরের ঠিক আগে।
  • Link to this news (বর্তমান)