• ভারতের বাজারে মাদক ছড়িয়ে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে আইএসআই, রিপোর্ট গোয়েন্দাদের
    বর্তমান | ১৭ নভেম্বর ২০২৫
  • অভিষেক পাল, বহরমপুর: তিনজন পাকিস্তানি যুবক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মাটিতে ছুড়ে ফেলল তিনটি প্যাকেট! তারপর? ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘উড়তা পাঞ্জাব’ যাঁরা দেখেছেন তাঁদের কাছে পরের ঘটনাক্রম মোটামুটি পরিষ্কার। মাদক আর অপরাধের হাত ধরাধরি করে চলা। যুব সমাজের মেরুদণ্ডটা ভেঙে দেওয়া। গোটা ভারতে যেন সেই ‘উড়তা পাঞ্জাব’-এর গন্ধ পাচ্ছেন গোয়েন্দারা। ভারতের অর্থনীতিকে তছনছ করতে এতদিন কালোটাকা ছড়িয়ে যাচ্ছিল পাকিস্তান। এবার টার্গেট ভারতের যুব সমাজ। তাদের উচ্ছন্নে পাঠাতে মাদককেই অস্ত্র করছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। যাতে করে অপরাধ বাড়ে সমান্তরালভাবে। অশান্তি-অস্থিরতা তৈরি হয় গোটা ভারতেই। কেননা মাদক এবং অপরাধ একে অপরের পরিপুরক। অর্থাৎ, যেখানে মাদক সেখানেই অপরাধ।  

    সম্প্রতি, ভারতের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তাদের আভ্যন্তরীণ রিপোর্টে। জানা গিয়েছে, ডি কোম্পানিকে দিয়েই আইএসআই ভারতীয় বাজারে মাদক সরবরাহ বাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে। দাউদ ইব্রাহিমের মাদক ব্যবসাকে সামনে রেখে বাংলাদেশে একাধিক ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট চালু করছে তারা। সেই সব ইউনিট থেকে ভারতে বিপুল পরিমাণ মাদক ঢোকানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ফলে, ইতিমধ্যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছেন গোয়েন্দারা। সেক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, উত্তর ২৪ পরগনার মতো সীমান্তবর্তী জেলাগুলি হয়ে উঠতে পারে মাদক পাচারের অন্যতম রুট। গোয়েন্দারা মনে করছেন, আইএসআইয়ের নিখুঁত পরিকল্পনামাফিক চলছে ডি সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রি করে আইএসআই সন্ত্রাসমূলক কাজকর্ম পরিচালনার পরিকাঠামোর নির্মাণে বিপুল অর্থের তহবিল তৈরি করছে। কিন্তু, ভারতে গোয়েন্দাদের তৎপরতায় দাউদ ইব্রাহিমের মাদক কারবারের নেটওয়ার্ক সেভাবে বৃদ্ধি পায়নি। এদিকে, পহেলগাঁও কাণ্ডের পাল্টা জবাবে পাকিস্তানের বহু 

    জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেগুলি পুনর্গঠনে আইএসআইয়ের হাতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সেই টাকা জোগাড় করতেই ডি-কোম্পানির মাদক ব্যবসা ভারতে বাড়াতে তৎপর আইএসআই। তাদের পরিকল্পনা মতো ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশের গ্রামে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বাজারে মাদক পাচারের জন্য বিশেষ মডিউলও চালু করে দিয়েছে ডি-সিন্ডিকেট। ছোট ছোট ম্যানুফ্যাকচারিং হাব ও গোডাউন স্থাপন করা হয়েছে।  এখন শুধু বাকি ক্যারিয়ার জোগাড় করা। মোটা টাকার অফার দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা ভারতীয় যুবকদের। তারাই মাদক পৌঁছে দেবে। পাশাপাশি আরও একটি পথ খোলা রাখছে কারবারিরা। ভারতীয় বাজারে ড্রাগ সাপ্লাই করতে মায়ানমার থেকে পরিচালিত মাদক মাফিয়াদের সঙ্গেও  ডি কোম্পানি গাঁটছড়া বেঁধেছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। 

    এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সেটাকেই সদ্ব্যবহার করতে চায় আইএসআই। সেই কারণেই ভারতীয় বাজারে মাদক পাচারে বাংলাদেশকে প্রধান পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে তারা। ভারত-বাংলাদেশের কাঁটাতার বিহীন সীমান্তগুলিকে ঠিক করা হয়েছে মাদক পাচারে। বিএসএফ নজরদারি চালালেও মাঝেমধ্যেই অনুপ্রবেশ এবং মাদক পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য দেখা যাচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে মুর্শিদাবাদের রানিনগর সীমান্তে বিএসএফ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী বাংলাদেশের দিক থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল বলেই খবর। মাঝেমধ্যেই লালগোলা, জলঙ্গি, সাগরপাড়া, রানিতলা, সূতি, সামশেরগঞ্জ সীমান্ত দিয়েও অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলে। এইসব সীমান্ত এলাকাগুলিকে এবার মাদক পাচারের ক্ষেত্রে আইএসআই ব্যবহার করতে পারে গোয়ন্দা সূত্রে খবর। 
  • Link to this news (বর্তমান)