‘তিনদিনে খেলা শেষ, তাও হার...’! হতাশ মাঠ-ফেরত ক্রিকেটপ্রেমীরা
বর্তমান | ১৭ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শনিবারের পর রবিবার সকালে আবার মেট্রো বিভ্রাট। ইডেন পৌঁছতে দেরি শহরের বহু দর্শকের। তবুও সবাই ভেবেছিল শীতের সকাল-দুপুর জমিয়ে খেলা দেখা যাবে। কিন্তু মোটেও ভালো কাটল না রোববার। ছ’বছর বাদে ইডেনে খেলা হচ্ছে। তার উপর তিনদিনেই খেলা ফিনিস। তার উপর ভারতও গেল হেরে। সকলের মুখ হয়ে গেল গোমড়া। খেলা শেষে দুপুর আড়াইটে নাগাদ রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ দিয়ে যেন মিছিল চলল। সবার গন্তব্য মেট্রো স্টেশন। কারও মুখে খেলার আলোচনা। কেউ কেউ বলছেন, ‘এত তাড়াতাড়ি বাড়ি যাব না। একটু ঘোরা যাক।’ গরম একটু বেড়েছে। তবুও মেট্রোর রাস্তা ছেড়ে হালকা রোদে পায়ে হেঁটে শহর ঘুরল মানুষ। ম্যাচ হারার হতাশা খানিক দূর হল। হাসি ফুটল মুখে। এসপ্ল্যানেড ঘুরে, রেস্তরাঁয় খেয়ে ‘দিল’ একটু হলেও ‘খুশ’।
এতো গেল শহরবাসীর কথা। অনেকে বাঁকুড়া-পুরুলিয়া থেকে খেলা দেখতে এসেছিলেন। তাঁরাও ‘ট্রেন এখনও ঢের দেরি গো’ বলে ঘোরাঘুরি শুরু করলেন। ‘এত তাড়াতাড়ি স্টেশনে গিয়ে কী করব বটে?’ বলে ফুচকার দোকানে ভিড় জমালেন। চলল পিচের দেদার সমালোচনা। গৌতম গম্ভীর সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েই চললেন। আর একদল খেলাপ্রেমী মানুষ ফুটপাতে জার্সি কিনতে থামলেন। কম দামে কিনে নেওয়ার চেষ্টা চলল দুপুরভর। তার আগের ছবিটা চূড়ান্ত হতাশার। কারও গায়ে নীল, কেউ পরেছেন সাদা জার্সি। সকলের মুখেই হতাশা। গম্ভীর মুখে স্টেডিয়াম ছেড়ে বের হলেন সমর্থকরা। বিধাননগরের বাসিন্দা অমলেন্দু রায় খ্যাঁক করে উঠলেন। বললেন, ‘ভারতের জয় দেখার জন্য এত তাড়াহুড়ো করলাম। শেষপর্যন্ত কয়েকটা উইকেট পড়া দেখে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। ধ্যুৎ। কোনও মানে হয়! এটা একটা পিচ হল!’
দুপুরবেলা তখন রোদ চড়চড় করছে। তা মাথায় লাগতে মেজাজ আরও চড়া। বাড়ি ফেরার পথে দুই বন্ধুর আলোচনা, ‘এরকম পিচ তৈরির কোনও মানে হয়? খেলা না দেখতে এলেই ভালো হতো।’ একইভাবে হতাশা উগড়ে দিলেন একদল তরুণ। তখনই ধর্মতলায় স্টেডিয়াম ফেরতদের মিছিল। ফুটপাতে জার্সি-টুপির দেদার দরদাম করে এক তরুণ বললেন, ‘শেষবেলায় কম দামে দিয়ে দেয়। দু’টো জার্সি দেড়শ টাকায় পেলাম।’ ময়দানে একদল তরুণ-তরুণী বসলেন। কোথায় যাওয়া যায় আলোচনা চলল। কেউ কেউ পা বাড়ালেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, রবীন্দ্র সদনের দিকে।
অনেকে এসেছিলেন সপরিবারে। দমদমের অভিষেক রায়ের বক্তব্য, ‘সাতসকালে মাঠে এলাম। আর দুপুরের মধ্যেই খেলা শেষ! ভারত হেরে ভূত! না এলেই ভালো হতো।’ ‘গিল হেরেছে’-বাবার হাত ধরে প্রথমবার মাঠে আসা খুদেটি প্রায় কেঁদে ফেলে ফেলে। ক্লাস ফোরে পড়ে। বলল, ‘অত দূর থেকে প্লেয়ারদের তো দেখতেই পেলাম না। খেলাও শেষ হয়ে গেল। আমি বাড়ি যাব না।’ বাবা ছেলের মন ভোলাতে জার্সি কিনলেন। তারপর একটু হাসি ফিরল ছেলের ঠোঁটে।
দুপুর থেকে বিকেল এরকম বহু রং ও বেরঙের ছবি ফুটল ইডেন থেকে ধর্মতলাজুড়ে। ক্রিকেটের দৌলতে শীতের শুরুতেই অন্য এক দুপুর দেখল কলকাতা।