• শীতের সবজিরও চড়া দর! বাজারে নাভিশ্বাস মধ্যবিত্তের
    বর্তমান | ১৭ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কথায় বলে, যার নেই কোনও গুণ তার নাম বেগুন। সেই বেগুন ১০০ টাকা কিলো। শীতের ফেভারিট মটরশুঁটি ৪০০ টাকা। শসা ১২০ টাকা। মাঝারি সাইজের কপি ২৫। শীতের সব্জি সিম, টম্যাটো, করলা, বিট, গাজর কোনওটার দর ৮০ টাকার নীচে নেই। মূলো পর্যন্ত ৪০ টাকা। পেঁয়াজকলি ১৫০! এমনিতেই পাঁঠার মাংসে হাত ছোঁয়ানো যায় না। এখনও তা ৮৫০। আর মুরগি ২৫০ টাকা কিলো। রুই-কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা! চিংড়ি-পারশে-পাবদা-ভেটকির কথা না তোলাই ভালো। তাহলে কি শুধু শাকপাতা খেয়ে থাকবে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত। সেখানেও তো শান্তি নেই। পালং শাকের পর্যন্ত দাম ৮০ টাকা। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির হার তলানিতে। তার অন্যতম কারণ, খাদ্যদ্রব্যের দাম অতিরিক্ত কম। গত সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ঋণাত্মক। ছিল (-) ২.২৮ শতাংশ। অক্টোবরে তা আরও কমে (-) ৫.০২ শতাংশে নেমে গিয়েছে।

    অসহায় মানুষ এসব কথা পড়ে-শুনে শুকনো হাসেন। আর প্রশ্ন করেন, ‘কেন এত দাম?’ মুখ্যমন্ত্রীর গড়ে দেওয়া বাজার সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য কমল দে বলেন, ‘গত দু’দিন ধরে বাজারদর চড়া। পাইকারি বাজারে বেগুন বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। অন্যান্য সবজির দামও বেশ চড়া। বাজারে ফুলকপি-বাঁধাকপির অঢেল জোগান আছে। তা কিছুটা সস্তা। যেহেতু দাম বৃদ্ধির তেমন কোনও বড় কারণ নেই, তাই দিন কয়েকের মধ্যে কিছুটা কমে যাবে।’ কমলবাবু দাম কমার বিষয়ে আশাবাদী। কিন্তু ঘর পোড়া গোরু সাধারণ মানুষ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছে বলে কোনও আশার আলো দেখে না।

    চলতি বছর বর্ষার সময় ব্যবসাদাররা বলেছিলেন, ‘এখন দাম বেশি। তবে কিছুদিন পর কমবে।’ তারপর পুজো এসে গেল। তখন দোকানদাররা বললেন, ‘শীত আসুক দাম কমবে।’ দেখতে দেখতে শীত এসে গেল। দাম কমল তো না-ই। উল্টে গেল বেড়ে। গত দু’দিনে দাম প্রায় মাত্রাছাড়া। কিন্তু কোনও উপায় নেই বেঁচে থাকতে খেতে হবে বলে কষ্ট হলেও বেশি দামেই খাদ্যদ্রব্য কিনতে হচ্ছে মানুষকে। অধিকাংশ মানুষ বলছেন, ‘এত বেশি দাম বলে কম পরিমাণ খেতে হচ্ছে। শিশুদের পর্যন্ত ঠিকঠাক পুষ্টিকর খাবার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ১০০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে ব্যাগ ভরছে না। তিন-চারদিনের জিনিসপত্র কেনাও সম্ভব হচ্ছে না।’      

    কলকাতা থেকে শহরতলি, সর্বত্র, সব বাজারের চিত্র অল্পবিস্তর একইরকম। এখন শহরে শীতের হালকা পরশ। গ্রামাঞ্চলে বেশি শীতভাব। এখন বাজারে শীতের সব্জি বেশি আসবে, দাম কম থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাজারে গেলেই হাড়ে কাঁপুনি ধরছে ক্রেতাদের। পটল-ঝিঙের মরশুম আপাতত শেষ। বাজারে ঝড়তিপড়তি যা মিলছে তার দর ৮০ টাকা। ঝিঙে ৬০। ছোট লাউ ৪০ টাকা। চালকুমড়োও তাই।

    অসময় বলে এই আনাজের দাম বেশি তা বোঝা যায়। কিন্তু শীতের আনাজে পর্যন্ত তো হাত দেওয়া যাচ্ছে না! সিম, টম্যাটো, করলা, বিট, গাজর ৮০ টাকার নীচে নেই। পেঁয়াজকলি ১৫০-১৬০। আকারে ছোট বাঁধাকপি পৌঁছেছে ৪০ টাকায়। অন্যান্য বছর তা ১৫ টাকায় মেলে। পালংশাকের ৮০ টাকা কিলো। পাকা কুমড়ো ৪০। কাঁচকলা ২০ টাকা জোড়া। ধনেপাতা ৩০০ টাকা কিলো। ১০ টাকা ছোট এক আঁটি। আর আমিষের কথা উঠলে চোখে দিয়ে জল বেরয়।  গত কয়েক দিন ধরে কলকাতা ও শহরতলি সাড়ে সাত টাকা পিস ডিম কিনছে। ৫০০ থেকে ৪৫০ টাকা কাতলা। ৪০০ থেকে ৩৫০ টাকা রুই। ব্রয়লার মুরগি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। বাজারে সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, ‘মানুষ খাবে কী?’ 
  • Link to this news (বর্তমান)