কয়েক দিন আগে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে। সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশ আবেদন করেছে, কোথাও বোমা বা আগ্নেয়াস্ত্র থাকার খবর পেলেই তাঁরা যেন ওই নম্বরে জানান। ঘটনাচক্রে, ওই হেল্পলাইন নম্বর চালু হওয়ার পর থেকেই জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ভূরি ভূরি বোমা এবং আগ্নেয়াস্ত্র মিলছে। একই সঙ্গে আতঙ্ক এবং স্বস্তির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের একাংশের মনে এই প্রশ্নও জাগছে, এত বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র কোথায় লুকিয়ে রাখা ছিল এতদিন? দুষ্কৃতীরা কোথা থেকেই সেগুলি পেল! এই বোমা তৈরি করতে যে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকের প্রয়োজন হয়, তা-ই বা আসছে কোথা থেকে!
জেলা পুলিশের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে যে সব বোমা উদ্ধার হচ্ছে, সেগুলি অনেক পুরানো। তাই সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় প্রচুর বোমার মশলা ঢুকেছে, এই আশঙ্কা অমূলক। তবে চোরাপথে সে সব যে আসছে। তা মেনে নিয়েছে পুলিশ। এ সব বন্ধে পুলিশ বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছেও বলেও জেলা পুলিশের কর্তারা জানান।
পুলিশের একটি সূত্রে দাবি, বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুর্শিদাবাদ জেলাকে বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্রমুক্ত করার জন্য রীতিমতো ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’ মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের আধিকারিকদের দাবি, শুধু দুষ্কৃতীই নয়, তাদের ‘মদতদাতা’ হিসেবে রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও একাংশকেও সতর্ক করা হয়েছে পুলিশের তরফে। স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে, বোমা বা আগ্নেয়াস্ত্রের কারবার বা রাজনৈতিক কারণে বোমা মজুতে যারাই যুক্ত থাকবে, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার এসপি কুমার সানি রাজ সাংবাদিক বৈঠকেও একই বার্তা দেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমরা হেল্পলাইন চালু করেছি। তার পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও নিয়মিত বার্তা দিচ্ছি বোমা-আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারিদের। এখনও সময় আছে। তারা ওই পথ থেকে সরে আসুক। না হলে ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে পুলিশ।’’
এক সময় প্রচুর পরিমাণে সকেট বোমা তৈরি হত ডোমকলে। সে সময় রাজ্যের অন্য জায়গা থেকে এমনকি ভিন্ রাজ্য থেকেও বোমার মশলা আসত চোরাপথে। তবে বর্তমানে সকেট বোমার কদর কমেছে। তার বদলে বেড়েছে আগ্নেয়াস্ত্রের চাহিদা। কারণ, এটি ব্যবহার করা সহজ। মজুত করে রাখার ঝুঁকিও অপেক্ষাকৃত কম। দুষ্কৃতীরা তো বটেই, অনেকে আবার অর্থ উপাজর্নের জন্য ব্যবসা হিসেবেও বেছে নিয়েছে এইবেআইনি কারবারকে।
জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র মূলত আসে বিহারের মুঙ্গের থেকে। তবে আগ্নেয়াস্ত্র জেলায় আনার ধরন কিছুটা বদলেছে। আগে ভিন্ রাজ্য থেকে তৈরি হওয়া অস্ত্র এখানে আনা হত। এখন আলাদা আলাদা যন্ত্রাংশ এনে সেগুলি একত্রিত করে জেলাতে তৈরি হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। খালি চোখে ওই যন্ত্রাংশ দেখে বোঝার উপায় নেই, সেটি কীসে ব্যবহৃতহতে চলেছে।