• এসআইআর আবহে উড়ছে ভুয়ো খবর, তথ্য-উদ্বেগ
    আনন্দবাজার | ১৭ নভেম্বর ২০২৫
  • সকালে খবরের কাগজ নয়, হাতে স্মার্টফোন। তাতেই ভাসছে একের পর এক গুজব। ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন অভিযান (এসআইআর) সংক্রান্ত। কেউ বলছেন— এ নাকি বিপদের বার্তা। কেউ বলছেন, লাল জামা পরে ছবি তুললে নাম বাতিল হবে। কেউ আবার জানাচ্ছেন, জমির দলিল না দিলে ভোট যাবে। সমাজ মাধ্যমে ঘুরে বেরাচ্ছে ভুয়ো তথ্য— ‘ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ গেলে ঠাঁই হবে ডিটেনশন ক্যাম্পে’, ‘দেশ ছাড়তে হতে পারে’ ইত্যাদি।

    অর্ধসত্য ও মিথ্যে দাবির জোয়ারে ভয় আর দুশ্চিন্তায় ভুগছেন বহু প্রবীণ নাগরিক। যেমন, এসআইআর ফর্মে যে ছবি দিতে হবে, তা কেমন হতে হবে? নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, ফর্মে পাসপোর্ট সাইজ ছবি সাঁটার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। ফর্মের উপরের অংশে ভোটারের পূর্ববর্তী ছবিটি ছাপা থাকে, কিন্তু নতুন ছবি না দিলে তালিকা থেকে নাম বাদ যাবে— এই ধারণাA ভুল। গত সোমবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) অফিস থেকেও এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে— ‘এনুমারেশন ফর্মে ছবি সাঁটা ঐচ্ছিক, বাধ্যতামূলক নয়।’ তবু বাস্তবে শহর ও গ্রামীণ এলাকার বহু মানুষ স্টুডিয়োর সামনে ভিড় জমাচ্ছেন।

    মনোচিকিৎসকেদের ভাষায়, এ এক নতুন মানসিক অসুখ— ‘ইনফো–অ্যাংজাইটি’। অর্থাৎ, তথ্যের অতিরিক্ত প্রবাহে সৃষ্ট উদ্বেগ। মনোরোগের চিকিৎসক মৃণালকান্তি সরকার বলেন, “অনেকেই বিশেষ করে, প্রবীণেরা বাস্তব তথ্য যাচাই না করেই সমাজ মাধ্যমে ঘুরে বেরানো ভিডিয়ো বা বার্তা বিশ্বাস করছেন। এই বিশ্বাস থেকেই তৈরি হচ্ছে ভয়, অনিদ্রা, রক্তচাপের মতো শারীরিক সমস্যা। এসআইআর ফর্ম পূরণের বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।”

    বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, প্রবীণদের একাকিত্বই এই আতঙ্কের অন্যতম কারণ। সন্তানেরা দূরে, প্রতিবেশীর সঙ্গে মেলামেশা কম। ফলে, স্মার্টফোনই হয়ে উঠছে তাঁদের একমাত্র সঙ্গী। আর তা থেকেই বাড়ছে ভয় ও বিভ্রান্তি। 'ইনফো-অ্যাংজাইটি' মানে তথ্যের ভিতরেই হারিয়ে যাওয়া। যত বেশি দেখা, তত বেশি ভয়। প্রবীণেরা বাস্তব ও গুজবের সীমারেখা আলাদা করতে পারছেন না।

    তাই মনো-বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সব সময়ে সমাজ মাধ্যমের সব দাবি বিশ্বাস না করে, সরকারি সূত্রের থেকেই তথ্য যাচাই করা ভাল। এই প্রসঙ্গে জেলা নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এসআইআর কোনও আতঙ্কের বিষয় নয়। বরং এটি ভোটারদের তথ্য যাচাইকরার সুযোগ।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)