• উত্তরের একাধিক আসন জয়ের চেষ্টায় বিজেপি
    আনন্দবাজার | ১৭ নভেম্বর ২০২৫
  • দক্ষিণের একেবারে বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে আছে নদিয়ার উত্তর। দক্ষিণে যেমন নিজেদের তিনটি শক্ত ঘাঁটি বা বিধানসভা তৃণমূলের কাছ থেকে উদ্ধার করতে হবে বিজেপিকে, তেমনই উত্তরে তৃণমূলকে আবার তাদের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র বিজেপির আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে হবে। কারণ, উত্তরের একটি বিধানসভা দীর্ঘকাল ধরে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে ভরাডুবি হচ্ছে তৃণমূলের।

    তেমনই দু’টি বিধানসভার ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটে এগিয়ে থাকছে বিজেপি। বিধানসভা ভোটে তৃণমূল জয়ী হলেও সেটাও খুবই কম ব্যবধানে। এ বার বিজেপির ঝুলিতে অতিরিক্ত অস্ত্র হিসাবে আছে এসআইআর। আছে প্রতিবেশী রাজ্য বিহারের ভোটে তাদের ব্যাপক সাফল্য। যার ফলে উত্তরের এই তিনটি বিধানসভা আসন বিজেপির হাত থেকে রক্ষা করা তৃণমূলের কাছে বড় চ্যালেঞ্চ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

    নদিয়ার দক্ষিণে যেমন ভোটার সংখ্যার নিরিখে মতুয়া, নমঃশূদ্র ও ও পার বাংলা থেকে আসা বাংলাদেশিদের প্রভাব বেশি, তেমনই উত্তরে প্রভাব সংখ্যালঘুদের। দক্ষিণের রানাঘাট লোকসভায় পর পর দু’বার জয়ী হয়েছে বিজেপি। বিধানসভা ভোটে এ দিকের ন’টির মধ্যে নবদ্বীপ বাদ দিয়ে ৮টি কেন্দ্রই জিতেছে বিজেপি। পরবর্তীতে অবশ্য উপ-নির্বাচনে তিনটি কেন্দ্র তৃণমূলের কাছে হাতছাড়া হয়েছে। উত্তরের চিত্র ঠিক এর উল্টো। এ দিকের সাতটি কেন্দ্রের মধ্যে কৃষ্ণনগর উত্তর বাদ দিয়ে সব ক’টি কেন্দ্রেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। পরে অবশ্য কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক মুকুল রায় বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দিলে সাতটি কেন্দ্রই তৃণমূলের দখলে চলে আসে। যদিও মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দিলেও ভোটের অঙ্কে অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি।

    ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত ভোট থেকে শুরু করে গত বছরের লোকসভা ভোটে এই এলাকা প্রবল ভাবে দখলে রেখেছে বিজেপি। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর দু’টো নির্বাচনেই ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। ফলে, এমনিতেই এই কেন্দ্রে তৃণমূল অনেকটা পিছিয়ে থেকে লড়াইয়ে নামবে। প্রায় একই অবস্থা বাকি কৃষ্ণনগর দক্ষিণ ও তেহট্ট বিধানসভা কেন্দ্র দু’টিতে। বলা হচ্ছে, অত্যন্ত কঠিন লড়াই হতে চলেছে এই দু’টি কেন্দ্রে। এমনিতেই বিগত দু’টো লোকসভায় পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। ২০২১ সালে তৃণমূলের উজ্জ্বল বিশ্বাস মাত্র প্রায় ন’হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। গত লোকসভা কেন্দ্রে সমসংখ্যক ভোটে পিছিয়ে থেকেছে তাঁর দল তৃণমূল। ফলে, এই কেন্দ্র ধরে রাখা তৃণমূলের পক্ষে কঠিন হবে বলেই মনে করছেন অনেকে।

    তেহট্টের অবস্থা আরও কঠিন। ২০১৯ ও ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে এগিয়ে থেকেছে বিজেপি। বরং, প্রায় ছ’হাজার বেশি ভোটে এ বার এগিয়ে আছে। শুধু তাই নয়, বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটে জয়ী হলেও লোকসভা ভোটে প্রায় আট হাজার ভোটে এগিয়ে আছে বিজেপি। ২০২১ সালের নির্বাচনেও কঠিন পরিস্থিতি ছিল তৃণমূলের। কিন্তু এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতি করার সুবাদে তাপস সাহা কোনও মতে সেই আসন রক্ষা করতে পারেন। সেই তাপস-ম্যাজিক এ বার আর দেখা যাবে না। তিনি মারা যাওয়ার পরে তেহট্টে যে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে বিজেপি কিছুটা হলেও সুবিধাজনক অবস্থান থেকে লড়াই শুরু করবে।

    বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সৈকত সরকার বলেন, “এসআইআর ও বিহারের ভোট তো আছেই, সেই সঙ্গে ওই তিনটি কেন্দ্রে আমাদের সংগঠন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী হয়েছে। ফলে, ওখানে আমরাই জিততে চলেছি।”

    যদিও তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান বলেন, “লোকসভার ভোটের, বিধানসভা ভোটের আঙ্গিক এক নয়। আর আমাদের রাজ্যের ভোটের সমীরকণ বিহারের সঙ্গে মিলবে না। এসআইআর কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)