সরকারি প্রকল্পের টানে স্কুলে ভর্তি! প্রচারে বিতর্ক
আনন্দবাজার | ১৭ নভেম্বর ২০২৫
সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা বরাবরই পাওয়া যায়। প্রায় নিখরচায় পড়াশোনার পাশাপাশি টিকাকরণ থেকে বৃত্তি, বিভিন্ন সুযোগ পায় ছাত্রছাত্রীরা। তাই বলে স্কুলে ভর্তির বিজ্ঞাপনে শুধুই সরকারি প্রকল্পের উল্লেখ? শিক্ষায় আগুয়ান জেলা পূর্ব মেদিনীপরের এক সরকারি বিদ্যালয় তেমনই হোর্ডিং টাঙিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে।
আগামী ১ জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হবে। তার আগে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি শুরু হয়ে গিয়েছে। কাঁথি-১ ব্লকের পানিপিয়া জুনিয়র হাই স্কুলের বিজ্ঞাপনী ব্যানারে জানানো হয়েছে, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, ঐক্যশ্রী, বিড়ি কার্ড-সহ অন্য সুবিধাযুক্ত বিনামূল্যে ছাত্র ভর্তির কথা।
বঙ্গোপসাগরের পাড়ে তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের বাস পানিপিয়ায়। সেখানকার ওই বিদ্যালয়ে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১২৮ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। রয়েছেন দু’জন স্থায়ী শিক্ষক এবং একজন অতিথি শিক্ষক। ছাত্র বর্তির জন্য সরকারি প্রকল্প প্রচারের প্রয়োজন কী? ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রসূন মাইতির বক্তব্য, ‘‘পিছিয়ে পড়া এলাকায় হওয়ায় অনেক কষ্টে ছাত্র ভর্তি করাতে হয়। অনেকে ভাবে জুনিয়র স্কুলে কম পরিষেবা পাওয়া যায়। তাই সকলের অবগতির জন্য এমন ব্যানার দিয়েছি।’’
সরকারি বিদ্যালয়গুলির পঠনপাঠনের মান নিয়ে সমালোচনা চলে। এই প্রচার ঘিরেও বিতর্ক থেমে নেই। নয়াপুট সুধীর কুমার হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বসন্তকুমার ঘোড়ই বলেন, ‘‘স্কুলে পড়ানোর পদ্ধতি জনমানসে তুলে ধরা যায়। কিন্তু এমন প্রচারই বলে দিচ্ছে পঠনপাঠনের মান কোথায় পৌঁছচ্ছে।’’ সরকারি রিপোর্ট বলছে, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একজনও স্কুলছুট নেই রাজ্যে। তবে নবম শ্রেণিতে গিয়ে প্রায় ১৭% পড়ুয়া অকৃতকার্য হচ্ছে, যা গোটা দেশের মধ্যে সর্বাধিক।
এর জন্য রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়া, পরিকাঠামোর অভাবের পাশাপাশি সরকারি সুযোগ-সুবিধা সর্বস্ব পড়াশোনাকে দায়ী করছে শিক্ষক মহলের একাংশ। এবিটিএ (অল বেঙ্গল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন)-র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক রানা ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘স্কুলগুলি সরকারি প্রকল্প রূপায়ণ কেন্দ্র হয়ে গিয়েছে।’’ দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক অরূপকুমার দাসেরও মত, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান সবাই ভাতার উপরে নির্ভরশীল থাকুন। পড়াশোনার মানোন্নয়ন নিয়ে সরকারি উদাসীনতার ফসল এই বিজ্ঞাপন।’’ তৃণমূল সমর্থিত মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনের কাঁথি জেলা সভাপতি শ্যামলকুমার বাঁকরা বলেন, ‘‘বাম আমলে বিনা খরচে পড়াশোনা চলছিল না। এখন সেই খরচ অনেকটাই লাঘব হয়েছে। হয়তো এই দৃষ্টিকোণ থেকে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ এমন প্রচার করেছেন। তবে না করলেই ভাল হত।’’