• পরিকাঠামো ও বিচারকের অভাবে হোঁচট খাচ্ছে ব্যারাকপুর আদালত
    আনন্দবাজার | ১৭ নভেম্বর ২০২৫
  • শহরের এক প্রান্তে পলেস্তরা খসা, স্যাঁতসেঁতে, জীর্ণ, ব্রিটিশ আমলের ঘরগুলিতে বসা আদালত নিয়ে আইনজীবী থেকে সাধারণ মানুষের অভিযোগ ছিল অনেক দিন ধরে। সেখানে বসার জায়গা থেকে দলিল-দস্তাবেজ রাখার জায়গাও হত না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আদালতে আসা লোকজন বসতেন গাছতলায়, বর্ষায় জড়সড়ো হয়ে ঠাঁই মিলত বারান্দাগুলিতে। ২০২০ সালে শহরের প্রাণকেন্দ্রে চালু হল নতুন আদালত ভবন। কিন্তু জায়গার অভাবটা রয়েই গিয়েছে বলে অভিযোগ।

    নতুন ব্যারাকপুর আদালত নিয়ে গত পাঁচ বছরে আইনজীবী থেকে আদালতে আসা মানুষজনের ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ও জেলা দায়রা আদালত মিলিয়ে মোট ১৫টি আদালত কক্ষ আছে ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতের এই নতুন ভবনে। ২৮টি থানার কয়েকশো ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার ফাইল প্রতিদিন খোলা হয় এখানে। সাক্ষ্য নেওয়া হয়, শুনানি চলে। অভিযোগ, সেখানে শৌচাগারের অভাব, বসার জায়গাটুকুও নেই। আইনজীবীরা কোনও রকমে টুল-বেঞ্চি পেতে ঠাসাঠাসি করে বসেন। কিন্তু বিচারের আশায় আসা সাধারণ মানুষজনের সে সুযোগটুকুও নেই। বয়স্ক মানুষদের মামলার জন্য তেতলা অবধি উঠতে হয়। অভিযোগ, ভিড়ের মধ্যে নিজের আইনজীবীর ‘সেরেস্তা’ খুঁজে বার করা দুষ্কর হয়ে ওঠে।

    এ ছাড়া, পরিকাঠামোগত সমস্যার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ধরে বিচারকের অভাবে বহু মামলা গতি হারাচ্ছে বলেও অভিযোগ। আইনজীবীরা জানান, গত অগস্টের গোড়ায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (১) মৌ চট্টোপাধ্যায় হাই কোর্টে বদলি হয়ে যান। তাঁর জায়গায় আসার কথা ছিল সিবিআই আদালতের বিচারক প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়ের। হাই কোর্ট বদলির কথা বললেও রাজ্যের আইন বিভাগ এখনও তাঁর বদলির বিষয়টি মঞ্জুর করেনি বলে সূত্রের খবর। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (২) অরিজিৎ মুখোপাধ্যায় সাময়িক ভাবে দায়িত্ব নিলেও দু’টি কোর্ট মিলিয়ে মামলার চাপ থাকছে অনেক বেশি। এর ফলে এনডিপিএস, পকসোর মতো স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলির পাশাপাশি অন্য বহু মামলা এসিজেএম (অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট) কোর্ট থেকে সেশনস কোর্টে এসে থমকে থাকছে বলে অভিযোগ করেছেন আইনজীবীরা। এখানে নেই সিভিল জজ সিনিয়র ডিভিশন কোর্ট। যার ফলে এডিজে ফার্স্ট কোর্টে বেশির ভাগ মামলা তোলা হয়। এতে বিচারকাজ ধীর গতিতে চলছে বলে সিভিল অ্যাডভোকেটদের অনেকেই জানিয়েছেন আইন বিভাগে।

    ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টেও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (৫) ও (২) দু’জনেই বদলি হয়ে গিয়েছেন যথাক্রমে গত ফেব্রুয়ারি ও সেপ্টেম্বর মাসে। ব্যারাকপুর আদালতের আইনজীবী বীরেন ভকত বলেন, ‘‘এর ফলে দৈনিক পঞ্চাশটির বেশি মামলা আটকে থাকছে। বিচারপ্রার্থীরা এসে সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যাচ্ছেন। শৌচাগার ও সকলের বসার জায়গার কথা তো এই ভবনে মহকুমা আদালত সরিয়ে আনার আগেই ভাবা উচিত ছিল। এর থেকে আগের জায়গায় অন্তত গাছতলায় বসতে পারতেন বিচারপ্রার্থীরা। এখানে সেটাও নেই।’’

    ব্যারাকপুর আদালতে বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুরনো জায়গাকেই যাতে নতুন করে সাজানো যায়, সেই প্রক্রিয়া চলছে। এখানকার পরিকাঠামো একেবারেই আদালতের মতো নয়। যে তিন বিচারক বদলি হয়েছেন, বহু দিন আগে তাঁদের জায়গায় বিচারক দেওয়ার জন্য আমরা আইন বিভাগের কাছে আর্জি জানিয়েছি। আর সিনিয়র সিভিল কোর্ট অবিলম্বে বারাসত থেকে এখানে নিয়ে আসার আর্জিও জানিয়েছি।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)