নতুনদের স্বপ্ন দেখানোর প্রয়োজন ছিল কি? প্রশ্ন ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীর
আনন্দবাজার | ১৭ নভেম্বর ২০২৫
স্কুল সার্ভিস কমিশনের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক এবং সংরক্ষণভিত্তিক কাট অফ নম্বরের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে শনিবার। একইসঙ্গে কোন কোন বিষয়ে কারা কারা পরবর্তী ধাপে নথি যাচাইয়ের জন্য ডাক পেলেন, সেই তালিকাও প্রকাশিত হয়েছে। তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন নবাগত (শিক্ষকের পেশায় অনভিজ্ঞ) পরীক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ। বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, অঙ্কের মতো বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া সত্ত্বেও পরবর্তী পর্বে ডাক পাননি একজনও নবাগত অসংরক্ষিত শ্রেণির পরীক্ষার্থী। সমাজ মাধ্যমে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন তাঁরা।
অভিজ্ঞতার জন্য অতিরিক্ত দশ নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পথে নামারও ডাক দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। তবে ২০১৬ সালের পরীক্ষায় চাকরি পাওয়া ‘অভিজ্ঞ ও যোগ্য’ প্রার্থীদের প্রায় সকলেই স্থান পেয়েছেন এই মেধা তালিকায়। ফলে কিছুটা স্বস্তির ছাপ তাঁদের চোখেমুখে।
প্রসঙ্গত, এসএসসির এই শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ে ৬০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। তার সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১০ নম্বর এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ১০ নম্বর ধরে মোট ৮০ নম্বরের মধ্যে কাট অফ নম্বর নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষকতার পেশায় অনভিজ্ঞ পরীক্ষার্থীরা প্রথমেই অভিজ্ঞতার ১০ নম্বরের মধ্যে শূন্য পাবেন। বাকি ৭০ নম্বরের মধ্যে যদি কেউ সম্পূর্ণ ৭০ নম্বরই পান, সেক্ষেত্রেও বেশ কিছু বিষয়ের কাট অফ নম্বরের থেকে তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর কমই থাকবে।
প্রত্যেকটি বিষয়ের ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতাহীন পরীক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতার মধ্যেই থাকার সুযোগ পাচ্ছেন না। পরীক্ষার্থীদের দাবি, যদি ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়েও পরবর্তী ধাপে ডাক না পাওয়া যায়, তা হলে অভিজ্ঞতাহীনদের পরীক্ষা নেওয়া হল কেন? যখন প্রতিযোগিতায় তাঁদের কোনও স্থানই নেই, তখন প্রত্যেকের ফর্ম পূরণ করার জন্য প্রদেয় অর্থ ফেরানোরও দাবি তোলা হয়েছে। অভিজ্ঞতার নম্বর বাদ দিয়ে সকলকে সমান সুযোগ দিয়ে নতুন তালিকা প্রকাশের দাবি উঠছে বিভিন্ন স্তরে।
সিউড়ির বাসিন্দা তথা ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষার্থী সায়ন চক্রবর্তী বলেন, “এই ব্যবস্থা স্পষ্টতই পক্ষপাতদুষ্ট। আমরা অনেকেই কঠোর পরিশ্রম করেছি, তাই রাগ ও হতাশা বেশি হচ্ছে। যদি এই ভাবনাই ছিল, তা হলে নতুনদের স্বপ্ন দেখানোরই কোনও প্রয়োজন ছিল কি?” বোলপুরের সুমন্ত পাল বাংলা বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, “নতুনদের নিয়ে ছেলেখেলা করা হল। এসএসসির আশা আমরা ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই আশা জাগিয়ে এ ভাবে হতাশ করার কোনও অর্থই নেই।”
অন্য দিকে, ২০১৬-র তালিকায় চাকরি বাতিল হওয়া ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের প্রায় সকলেই ফিরে এসেছেন এই তালিকায়। তেমনই এক শিক্ষক সিউড়ির মহেন্দ্রনাথ পাল বলেন, “চাকরি বাতিলের তালিকা প্রকাশের পর যে উৎকণ্ঠা ছিল তা কিছুটা কমেছে। তবে নতুন নিয়োগপত্র হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আশঙ্কা পুরোপরি দূর হবে না।”