হিমঘরে আলু রাখার সময়সীমা শেষ হতে চলেছে। কিন্তু এখনও রাজ্যের হিমঘরগুলিতে জমে প্রায় ১৫ লক্ষ টন আলু। আলু ব্যবসায়ীদের দাবি, এমনিতেই এ বছর লোকসানে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। হিমঘরে রাখার মেয়াদ না বাড়ানো হলে, ক্ষতি আরও বাড়বে। তাঁদের আরও অভিযোগ, গত বছর রাজ্যের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ভিন্-রাজ্যে আলু পাঠানোয় কড়াকড়ি করে। সে সুযোগে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসমের মতো যে সব রাজ্য এখান থেকে আলু রফতানি করত, সেখানকার বাজারে ঢুকে পড়ে উত্তরপ্রদেশের আলু। সে বাজার ধরে রেখেছে তারা।
এ বছর ভিন্-রাজ্যে আলু পাঠানো নিয়ে কড়াকড়ি ছিল না। ব্যবসায়ীদের দাবি, গত পাঁচ বছরের মধ্যে এ বারই সবচেয়ে বেশি আলু (৪৯০টি হিমঘরে ৭৪ লক্ষ ১৯ হাজার টন) মজুত হয়েছে হিমঘরে। অতীতে রাজ্যে উৎপাদিত আলুর ৪২-৪৫ শতাংশ ভিন্-রাজ্যে যেত। ২০২৩ সালে তা যায় প্রায় ৪০ শতাংশ। গত বার তা কমে দাঁড়ায় ৩২ শতাংশের কাছাকাছি। এ বারও তা ৩২-৩৫ শতাংশ। এর ফলে, নভেম্বরের শেষে ১২ লক্ষ টন আলু হিমঘরে পড়ে থাকবে, অনুমান ব্যবসায়ীদের।
তবে এত আলু হিমঘরে জমে থাকলেও, আবহাওয়ার কারণে তা বিক্রির সুযোগ রয়েছে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, টানা বৃষ্টিতে আলু চাষ কিছুটা পিছিয়েছে। উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে, সেখানেও চাষ পিছোচ্ছে। ফলে, নতুন আলু বাজারে আসতে দেরি। তত দিন সংরক্ষিত আলুই ভরসা। তাই হিমঘরে আলু থাকলেও, বাজারে এখন দাম কমার সম্ভাবনা কম।
‘প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি’র রাজ্য সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘গত বছর বাইরে পাঠাতে বাধা দেওয়ার কারণে, পুরনো আলু বাজারে রয়ে গিয়েছিল। এ বার নভেম্বরের শেষে হিমঘরে প্রায় ১৬% আলু জমে থাকবে।’’ হিমঘর মালিক সংগঠনের চেয়ারম্যান পতিতপাবন দে বলেন, ‘‘গত বছর ভিন্-রাজ্যে আলু যেতে না দেওয়ার প্রভাব পড়েছে।’’
চলতি মরসুমে খোলা বাজারে কেজি প্রতি জ্যোতি আলুর দর ঘোরাফেরা করেছে ১৫-২০ টাকার মধ্যে। চন্দ্রমুখী আলু কেজি প্রতি ২৪-২৮ টাকায়। ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি জগবন্ধু মণ্ডলের দাবি, “এ বার গোড়া থেকেই কার্যত লোকসানে আলু বিক্রি করতে হয়েছে। কেজি প্রতি আরও তিন টাকা দাম বেশি মিললে, সেটা হত না। জোগান-চাহিদার উপরেই কাঁচামালের দাম নির্ধারণ হয়, এটা সরকারকে বুঝতে হবে।”
হিমঘর মালিক সংগঠন জানায়, পরিস্থিতির কথা রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে। ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তা লালু জানান, কৃষি বিপণন দফতরকে চিঠি দিয়ে হিমঘরে আলু রাখার মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন জানানো হচ্ছে। রবিবার দফতরের মন্ত্রী বেচারাম মান্নার সঙ্গে সংগঠনের একটি প্রতিনিধিদল দেখা করে। মন্ত্রী বেচারাম বলেন, “দফতরের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। তা পর্যালোচনা করা হবে।” রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা তথা পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “পর্যালোচনার পরে, প্রয়োজনে, হিমঘরে আলু রাখার সময়সীমা বাড়ানো হবে।”