এককথায় নজিরবিহীন! তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, রাজভবনে অস্ত্র মজুত আছে। তার পর তড়িঘড়ি নিজের উত্তরবঙ্গ সফর কাটছাঁট করে কলকাতা ফিরে এসে রাজভবনে চিরুনি তল্লাশি করাতে চলেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, রাজভবনের ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের এখনও কয়েক মাস বাকি। এখনও নির্বাচনের উত্তাপ সে ভাবে অনুভব করা যায়নি। সেই আবহেই রাজ্যপাল আনন্দ বোসের সঙ্গে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণের সংঘাত বড় আকার নিতে চলেছে। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর) নিয়ে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণের তোপের মুখে পড়েন রাজ্যপাল। তাঁর অভিযোগ— রাজভবনে বিজেপি-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দিচ্ছেন বোস এবং রাজভবনের মধ্যেই অস্ত্রশস্ত্র মজুত রাখা হচ্ছে। এই বিস্ফোরক মন্তব্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করে পাল্টা জবাব দেয় রাজভবন। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রবিবারই বিবৃতি জারি করা হয়। আর সোমবার আচমকাই উত্তরবঙ্গ সফর মাঝপথে থামিয়ে কলকাতায় ফিরে আসছেন রাজ্যপাল। ফেরার পরে রাজভবনে তাঁর নেতৃত্বেই চলবে এক বৃহৎ যৌথ চিরুনি তল্লাশি (কম্বিং অপারেশন)— যা সরাসরি টিভিতে সম্প্রচার করা হবে বলে জানিয়েছে রাজভবন।
সোমবার সকালে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজ্যপালের বাইরে থাকার কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে তিনি রাজভবনে ফিরছেন এবং তাঁর নির্দেশেই গোটা রাজভবন ভবন ও প্রাঙ্গণে যৌথ চিরুনি তল্লাশি চলবে। এই অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন রাজ্যপাল স্বয়ং। কলকাতা পুলিশ, রাজভবন পুলিশ আউটপোস্ট, সিআরপিএফ, বম্ব স্কোয়াড ও ডগ স্কোয়াড— এই পাঁচ বাহিনী মিলে অভিযানে অংশ নেবে। পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দফতর ও সিভিল ডিফেন্স অগ্নিনির্বাপণ মহড়াও পরিচালনা করবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সোমবার দুপুর ২.৩০-এ সম্পূর্ণ রাজভবন খালি করা হবে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, এই পুরো অপারেশন লাইভ সম্প্রচার করা হবে এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও বিদ্বজ্জনদের একাংশ উপস্থিত থাকবেন।
রাজভবনের তরফে এই ধরনের অতিসক্রিয়তা ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণের অভিযোগকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাতেই কি এমন নজিরবিহীন চিরুনি তল্লাশি? না কি রাজভবনের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, অভিযোগের তীব্রতাকে রাজনৈতিক ভাবে জবাব দিতেই রাজভবন এত বড় আকারের অপারেশনের ঘোষণা করেছে। তাদের মতে, রাজ্যপালের এই পদক্ষেপ মূলত সাংসদ কল্যাণের অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ প্রমাণ করারই প্রচেষ্টা। তাঁদের মতে, তৃণমূল সাংসদের অভিযোগ ‘দায়সারা ও অযৌক্তিক’ প্রমাণ করতে রাজভবনের এমন পদক্ষেপ।
রাজ্য রাজনীতিতে রাজভবন-নবান্ন সম্পর্কের টানাপড়েন দীর্ঘ দিনের। ভোটের আগে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনী নিয়ে দুই পক্ষের অবস্থান আরও তীব্র হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজভবনের যৌথ চিরুনি তল্লাশিকে অনেকেই ‘নজিরবিহীন’ ও ‘রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন। সোমবারের এই চিরুনি তল্লাশি রাজ্যের রাজনৈতিক আবহে নতুন বিতর্ক তৈরি করে, না কি রাজভবনের অবস্থান পরিষ্কার করতে সাহায্য করে— তা অবশ্য সময়ই বলবে।