ফের কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সংঘাত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে পাহাড়ে নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আইপিএস পঙ্কজকুমার সিংহের নিয়োগ ঘিরে বাড়ছে সংঘাত। তিনি সম্প্রতি পাহাড়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বলে খবর। গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক বলে ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার আর্জিও জানিয়েছেন তিনি।
১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে প্রথম চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পদক্ষেপ পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছিলেন তিনি। সেই চিঠির কোনও প্রতিক্রিয়া কেন্দ্রের তরফে এখনও দেওয়া হয়নি। সেই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ এলাকার প্রশাসন, শান্তিরক্ষার বিষয় সরাসরি রাজ্য সরকারের অধীন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করা হয়নি। একতরফা ভাবে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করা হয়েছে, যা সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আঘাত। সোমবার ফের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই চিঠির বিষয়বস্তুও একই।
আগের চিঠিতেও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৭ নভেম্বর, সোমবার প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের বিষয়ে আপনার হস্তক্ষেপের পরেও, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ১০ নভেম্বরের একটি চিঠিতে জানিয়েছে যে, মধ্যস্থতাকারীর দপ্তর ইতিমধ্যেই কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। এটা বিস্ময়কর।’ এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাহাড়ের শান্তি এবং স্থিতাবস্থা নষ্ট হবে বলেও মনে করছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, দার্জিলিং রাজ্যের বিষয়, কেন্দ্রের নয়। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়াং পশ্চিমবঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গোরখা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, ২০১১ অনুযায়ী পাহাড়ের প্রশাসনিক বিষয় রাজ্যের অধীনেই পড়ে। সেই আইন অনুযায়ী গভর্নমেন্ট বলতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেই বোঝানো হয়। তাই পাহাড়ের বিষয়ে ইন্টারলোকিউটার নিয়োগ করার মতো ক্ষমতা কেন্দ্রের নেই বলেও চিঠিতে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আইনবহির্ভূত, সংবিধানের পরিপন্থী এবং ক্ষমতার অপপ্রয়োগ।’
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী আরও লিখেছেন, ‘রাজ্যের আইনগত অধিকার যেখানে স্পষ্টভাবে নির্ধারিত, সেখানে কেন্দ্রের এমন হস্তক্ষেপ দেশের ফেডারেল কাঠামোর প্রতি আঘাত।‘ তিনি মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা। চিঠির শেষে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন, ‘অবিলম্বে এই একতরফা এবং অসাংবিধানিক পদক্ষেপ প্রত্যাহার করুন।‘
আশির দশকে পাহাড় তখন উত্তাল। সুবাস ঘিসিং গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের মাধ্যমে দার্জিলিং জেলাকে একটি পৃথক রাজ্য করার দাবি তুলেছিলেন। সেই সময় কংগ্রেস সরকার দার্জিলিঙের দলীয় সাংসদ ইন্দ্রজিৎ খুল্লারকে মধ্যস্থতাকারীর দায়ি্ত্ব দেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালে ইউপিএ আমলেও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিজয় মোহনও এই দায়িত্বে ছিলেন। তবে তিনি ২০১১ সালে জিটিএ চুক্তির আগেই পদত্যাগ করেছিলেন।
২০১১ সালে পাহাড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যস্থতায় জিটিএ তৈরির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। আগের চিঠিতেই প্রধানমন্ত্রীকে তিনি লিখেছিলেন, ‘গোর্খাদের নিজস্ব পরিচিতি বজায় রেখে, সব অংশের সম্প্রীতি রক্ষা করে পাহাড়ের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভাষা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই জিটিএর লক্ষ্য।’ পাহাড় নিয়ে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন ‘পাহাড়ে কষ্টার্জিত শান্তির পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে গোর্খা বা জিটিএ সম্পর্কিত যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।’