এসএসসি ইন্টারভিউয়ের তালিকা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা, ইন্টারভিউয়ের তালিকায় অযোগ্যদের নাম
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৭ নভেম্বর ২০২৫
স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে ফের অনিয়মের অভিযোগ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও ইন্টারভিউর তালিকায় বহু‘অযোগ্য’প্রার্থীর নাম। লিখিত পরীক্ষায় পুরো নম্বর পেয়েও নতুন পরীক্ষার্থীদের অনেককে ইন্টারভিউতে ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ। কেউ কেউ আবার প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা দেখিয়ে অতিরিক্ত ১০ নম্বর পেয়েছেন বলে অভিযোগ। এ রকম একগাদা অনিয়মের অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করলেন শিক্ষকদের একাংশ। বিচারপতি অমৃতা সিনহা মামলা গ্রহণ করেছেন। আগামী বুধবার মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা।
মামলাকারীরা দাবি করেছেন, ইন্টারভিউয়ে ডাক পাওয়া চাকরিপ্রার্থীদের তালিকায় একাধিক ‘দাগি অযোগ্য’-এর নাম রয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক স্কুলে চাকরি করা ব্যক্তিরাও শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা দেখিয়ে অতিরিক্ত ১০ নম্বর পেয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। আইনজীবী ফিরদৌস শামিম জানিয়েছেন, আংশিক সময়ের জন্য কাজ করতেন এমন শিক্ষকরাও তাঁদের কাজের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে এই সুবিধা নিয়েছেন।
১৯৯৭ সালে জন্ম এমন প্রার্থীরাও শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকার জন্য নম্বর পেয়েছেন বলে অভিযোগ। এত অল্প বয়সে কী ভাবে তাঁরা অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে ইন্টারভিউয়ের তালিকাতয় জায়গা করে নিলেন তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের দাবি, ভুল সংশোধন করে মেধা অনুযায়ী নাম তুলে ফের প্রকাশ করতে হবে ইন্টারভিউয়ের তালিকা। এ সব অনিয়মের বিরুদ্ধেই হাইকোর্টে দ্বারস্থ হয়েছেন শিক্ষকেরা।
মামলাকারীর আইনজীবী এ দিন আদালতে বলেন, ‘ইন্টারভিউয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সুযোগ পেয়েছেন অযোগ্যরা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, কোনও অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না। অথচ ইন্টারভিউয়ে যাঁদের ডাকা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে টেন্ডেড প্রার্থীদেরও নাম রয়েছে। সেকেন্ডারি শিক্ষকরা পূর্ব শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বরাদ্দ ১০ নম্বরের সুবিধা পেয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষকরাও সুবিধা পেয়েছেন। যাঁদের ১৯৯৭ সালের জন্ম, তাঁরাও এই সুবিধা পেয়েছেন।’
শনিবার রাতে এসএসসির একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ইন্টারভিউয়ের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এর পরেই দানা বাঁধে বিতর্ক। তালিকায় ২০ হাজার জনের নাম থাকলেও যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করেছেন, তাঁদের অনেকেরই নাম নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার, নতুন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে ৬০-এ ৬০ পেয়েও ইন্টারভিউয়ে ডাক পাননি বলে দাবি করা হচ্ছে।
চাকরিহারা শিক্ষক তথা এসএসসি আন্দোলনের অন্যতম মুখ চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘তালিকায় নাম নেই। কাট অফের থেকে তিন নম্বর কম পেয়েছি। অথচ তালিকা মিলিয়ে দেখলাম, অযোগ্যদের তালিকায় থাকা একজনকে পর্যন্ত ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়েছে।’ একাদশ-দ্বাদশে সুযোগ না পেলেও আপাতত নবম-দশমের ফলপ্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।
যদিও এসএসসি-র দাবি, সব কিছু নিয়ম মেনেই হয়েছে। এ বছর একাদশ-দ্বাদশে শূন্যপদ ছিল ১২,৪৪৫টি। লিখিত পরীক্ষার পর ২০ হাজার পরীক্ষার্থীর নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এই ২০ হাজার চাকরিপ্রার্থীকে প্রথমে নথি যাচাইকরণ এবং পরে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হবে। ইন্টারভিউয়ে প্রতিটি শূন্যপদের জন্য ডাকা হয়েছে ১৬ জনকে।
এসএসসি-র ২০১৬ সালের নিয়োগের গোটা প্যানেল বাতিল করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ফলে চাকরিহারা হয়েছিলেন ১৭,২০৭ জন শিক্ষক–শিক্ষিকা। ১,৮০৪ জন ‘টেন্টেড’কে বাদ দিয়ে তথাকথিত ‘যোগ্য’ প্রার্থীদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিয়েছিল এসএসসি। স্কুলশিক্ষা দপ্তর চলতি বছরের ৩০ মে নতুন নিয়োগ বিধিতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত পদে যাঁরা এতদিন কর্মরত শিক্ষক ছিলেন, তাঁদের অভিজ্ঞতার জন্য সর্বোচ্চ ১০ নম্বর বরাদ্দ করেছিল।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিকাশ ভবন অভিযানে এসএসসির নতুন চাকরি-প্রার্থীরা। করুণাময়ী থেকে মিছিল করে বিকাশ ভবনের দিকে অভিযান চালায় তাঁরা। প্রার্থীদের অভিযোগ, অভিজ্ঞ শিক্ষকদের অতিরিক্ত ১০ নম্বরই তাঁদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করছে। তাই সেই ১০ নম্বর অবিলম্বে বাতিল করার দাবি তুলেছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, শূন্যপদের সংখ্যা বাড়ানো ও প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর ওএমআর প্রকাশের দাবিও তুলছেন বিক্ষুব্ধরা।
পরীক্ষার্থীদের প্রতিবাদে করুণাময়ীতে চলছে স্লোগান, ধর্না, প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ। বিকাশ ভবনের দিকে যাত্রা করার পরিকল্পনা প্রার্থীদের।এ সএসসি কর্তৃপক্ষের তরফে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে প্রশ্ন উঠছে, ফুল মার্কস পেয়ে কেউ যদি ইন্টারভিউয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছতে না পারে, এই নিয়োগ ব্যবস্থার স্বচ্ছতা কোথায়?