• বিহারের ভোট ‘মডেল’ হলে তো ক্ষমতাসীন দলকে সরানো সমস্যা হবে, ‘টাকা দা‌ও-ভোট নাও’ পন্থা নিয়ে মত লিবারেশনের দীপঙ্করের
    আনন্দবাজার | ১৭ নভেম্বর ২০২৫
  • সদ্যসমাপ্ত বিহারের ভোট যদি দেশের সংসদীয় রাজনীতিতে ‘মডেল’ হয়ে যায়, তা হলে কোনও ক্ষমতাসীন দলকেই গদিচ্যুত করা যাবে না। এমনই অভিমত সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের। তাঁর বক্তব্য, যে ভাবে বিহারে শেষ দু’মাসে ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে, তা যদি ‘বৈধতা’ পেয়ে যায়, তা হলে ভারতে নির্বাচনের আর কোনও গুরুত্বই থাকবে না।

    বিজেপি-বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক হিসাবে বিহারে মহাগঠবন্ধনে ছিল লিবারেশন। ২০২০ সালের নির্বাচনে তারা ১২টি আসন জিতলেও এ বার নেমে এসেছে দু’টিতে। সার্বিক ভাবে আরজেডি, কংগ্রেসেরও ভরাডুবি হয়েছে বিহারে। দীপঙ্করের কথায়, ‘‘ঠিক ভোটের আগে বার্ধক্যভাতা ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হল ১,১০০ টাকা। মিড ডে মিল কর্মীদের ভাতা ছিল মাসিক ১,৬৫০ টাকা। সেটা দ্বিগুণ করে দেওয়া হল। সেই সঙ্গে ১ কোটি ২১ লক্ষ মহিলার অ্যাকাউন্টে সরাসরি ১০ হাজার টাকা করে পৌঁছে গেল ভোটের মধ্যে। এ পদ্ধতি যদি বৈধতা পেয়ে যায়, তা হলে সবাই এই জিনিস করবে। নির্বাচনের আর কোনও মানে থাকবে না।’’

    দীপঙ্করের মতে, নির্বাচন কমিশনের উচিত এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা। আদর্শ আচরণবিধির মতোই বলা উচিত, ভোটের ছ’মাস আগে থেকে টাকা বিলি বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে জনস্বার্থ মামলা করা যায় কি না, তা-ও ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অতিবাম দলটির বাঙালি সাধারণ সম্পাদক। দীপঙ্করের যুক্তি, নির্বাচনী বন্ড বন্ধ হতে পারলে ভোটের আগে টাকা বিলির কৌশলও বন্ধ হওয়া উচিত। এর ফলে পাঁচ বছরের মেয়াদে চার বছর ১০ মাস কাজ না-করে শেষ দু’মাসে খালি টাকা বিলি করে ক্ষমতায় টিকে যাবে ক্ষমতাসীন দল।

    উল্লেখ্য, বিহারে নীতীশ কুমার এবং বিজেপি জোটের প্রবল শক্তি নিয়ে প্রত্যাবর্তনের ফলে বঙ্গের শাসকদল তৃণমূলও ‘উদ্বুদ্ধ’। কারণ, মহিলাদের হাতে নগদ দেওয়ার রাজনীতি বিহারে জয়ী হয়েছে। যে রাজনীতি ধুয়েমুছে দিয়েছে স্থিতাবস্থা বিরোধিতা। কারণ, এই রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম সেই পথ দেখিয়েছিলেন। তার পর নয় নয় করে দেশের অন্তত আটটি রাজ্যে সেই পথে হেঁটেই বাজিমাত করেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলি। কোথাও সেই দল বিজেপি, কোথাও কংগ্রেস আবার পড়শি রাজ্যে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা। তিনি কি মনে করছেন যে, ২০২৬ সালে এই মডেলেই নবান্নে প্রত্যাবর্তন হবে মমতার? জবাবে দীপঙ্কর বলেন, ‘‘শুধু বাংলা কেন? এই মডেল বৈধতা পেলে কেরল, তামিলনাড়ুতেও একই পথ অনুসরণ করা হবে।’’ উল্লেখ্য, কেরলে রয়েছে সিপিএমের সরকার আর তামিলনাড়ুতে ডিএমকে। দুই দলই বিজেপি-বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র শরিক।

    সোমবার থেকে উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটিতে শুরু হচ্ছে লিবারেশনের রাজ্য সম্মেলন। সেখানে যোগ দিতেই বিহার থেকে কলকাতায় এসেছেন দীপঙ্কর। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে রাজ্যে তৃতীয় শক্তির বিকাশ ঘটাতে ‘বামপন্থার পুনর্জাগরণ’-এর ডাক দিয়েছেন তাঁরা। এই বিষয়ে সোমবার নৈহাটিতে সিপিএম, সিপিআই-সহ পাঁচটি বাম দলকে নিয়ে আলোচনাসভাও অনুষ্ঠিত হবে। তবে বামেদের মঞ্চকে দৃঢ় করার ডাক দিলেও সিপিএমের সঙ্গে যে তাদের ‘লাইনের ফারাক’ রয়েছে, তা আরও এক বার স্পষ্ট করে দিয়েছেন দীপঙ্কর। সিপিএম যেমন বিজেপি এবং তৃণমূলকে এক বন্ধনীতে ফেলে আক্রমণ করে, লিবারেশন সেই পথে হাঁটতে চায় না। দীপঙ্কর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আমরা বিজেপি এবং তৃণমূলকে এক করে দেখি না। বরং আমরা পশ্চিমবঙ্গকে অ-বিজেপিশাসিত রাজ্য বলেই মনে করি।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)